কম্পিউটারের মাধ্যমে যেকোনো অর্থ যুক্ত ফলাফল পাওয়ার জন্য ডাটা ও ইনফর্মেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ডাটা ও ইনফর্মেশন কি, ডাটার প্রকারভেদ(what is data type), ডাটা প্রসেসিং চক্র এবং ডাটা ও ইনফর্মেশনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হয়েছে। যা আপনাদের পুরো বিষয়টি বুঝতে খুবই সাহায্যকারী হবে।

what is data type
Image by StartupStockPhotos from Pixabay

A. ডাটা (Data)

ডাটা হল পরিবেশ থেকে গৃহীত একটি ইনপুট। এটি অর্থহীন, অসংগঠিত এবং নিষ্ক্রিয় প্রাথমিক নির্দেশ যা সংগ্রহকারীদের কর্মে উৎসাহিত করে না। যেমন- কোন ব্যক্তির নাম, বয়স, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি। ডাটা বা তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ডাটা কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিম্নে ডাটা বা তথ্যের প্রকারভেদ করে আলোচনা করা হল।–

ডাটার প্রকারভেদ (what is data type)

ডাটা বা তথ্য সাধারনত তিন প্রকারের। এগুলি হল নন ডিজিটাল ডাটা, ডিজিটাল ডাটা এবং লজিক্যাল ডাটা।

i ) নন-ডিজিটাল ডাটা ( Non-digital data)

যে সমস্ত ডাটা কম্পিউটারে সরাসরি বিশ্লেষণ বা প্রসেসিং করা যায় না তাকে নন-ডিজিটাল ডাটা বলে। যেমন- গান, ছবি আঁকা, সংখ্যা ও বিভিন্ন অক্ষর। নিম্নে নন-ডিজিটাল ডাটা গুলি উল্লেখ করা হলো।

a) নিউমেরিক ডাটা

নিউমেরিক ডাটাকে সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নিউমেরিক সংখ্যাগুলি দুই রকমের। একটি হলো পূর্ণ সংখ্যা এবং অপরটি হল দশমিক সংখ্যা। যেমন পূর্ণমান-100, ক্রমিক সংখ্যা-26, বয়স-55 ইত্যাদি। দশমিক সংখ্যা আবার দুই ধরনের হয়, একটি হলো স্থির বিন্দু যুক্ত সংখ্যা এবং অপরটি হল ভাসমান বিন্দুযুক্ত সংখ্যা।

স্থির বিন্দুযুক্ত সংখ্যা(fixed point number)- দশমিক সংখ্যার দশমিক বিন্দুটি স্থির রেখে যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয় তাকে স্থির বিন্দুযুক্ত সংখ্যা বলা হয়। যেমন – 6.78, 56.34 ইত্যাদি।

ভাসমান বিন্দুযুক্ত সংখ্যা (floating point number) – দশমিক সংখ্যার দশমিক বিন্দুর স্থান পরিবর্তন করে সংখ্যা প্রকাশ করলে তাকে ভাসমান বিন্দুযুক্ত সংখ্যা বলে। যেমন- 3.75 × 102 , 0.456 × 115 ইত্যাদি।

b) আলফাবেটিক বা টেক্সট ডাটা (alphabetic or text data)

ইংরেজি আলফাবেট বা অক্ষর (যেমন- A, B, Y, Z, a, b, -y, -b) এবং বিশেষ অক্ষর (যেমন- #, @, &, নাম, ঠিকানা) ইত্যাদির দ্বারা যে ডাটা প্রকাশ করা হয় তাকে টেক্সট ডাটা বা আলফাবেটিক ডাটা বলে।

c) আলফা নিউমেরিক ডাটা (alpha neumeric data)

যে ডাটা আলফাবেট এবং নিউমেরিক উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত হয় তাকে আলফা নিউমেরিক ডাটা বলে। যেমন- ইমেইল এড্রেস (haristech123@gmail.com), গাড়ির নাম্বার (WB 05 AC 6754), লাইব্রেরির সদস্য নম্বর (NO-12367) ইত্যাদি।

d) গ্রাফিক্স ডাটা (graphics data)

এটি ছবি সংক্রান্ত ডাটা। যেমন- ফটোগ্রাফ, ড্রয়িং ও রেখাচিত্র ইত্যাদি।

e) অডিও ডাটা (audio data)

যে ডাটা শব্দের সঙ্গে সম্পর্কিত অর্থাৎ শব্দ সংক্রান্ত ডাটাকে অডিও ডাটা বলে। যেমন- কথা ও গান ইত্যাদি।

f) ভিডিও ডাটা (video data)

চলমান ছবি সংক্রান্ত সমস্ত ডাটা, এই ডাটার অন্তর্গত। যেমন- অ্যানিমেশন ও মাল্টিমিডিয়া এই ডাটার অন্তর্গত।

ii) ডিজিটাল ডাটা (digital data)

ডাটা ইনপুট হিসেবে কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয়, এবং সেই ডাটা গুলিকে কম্পিউটার প্রসেসিং করার পর যে ডাটার উৎপত্তি সেই সমস্ত ডাটাকে ডিজিটাল ডাটা বলে। অর্থাৎ কম্পিউটার ডাটা প্রসেস করার পর সমস্ত প্রকার ডাটাই ডিজিটাল ডাটা হিসেবে পরিগণিত হয়।

iii) লজিক্যাল ডাটা (logical data)

যে ধরনের ডাটা গুলিতে on/off, true/false, high/low প্রভৃতি দুটি শর্তের মধ্যে যেকোনো একটি শর্ত বিবেচিত হয় তাকে লজিক্যাল ডাটা বলে। যেমন- কোন পরীক্ষায় PASS মার্কস 30 হয়, যদি কোন শিক্ষার্থী 29 পাই সেক্ষেত্রে সে FAIL বলে বিবেচিত হয়।

B) ইনফর্মেশন (what is information)

ইনফর্মেশন হল আউটপুট, কম্পিউটারে ডাটা গুলি বিশ্লেষিত হয়ে যে অর্থপূর্ণ, সক্রিয়, ব্যবহার উপযোগী ও সু সংগঠিত ফলাফল পাওয়া যায় সেগুলিকেই ইনফর্মেশন বলা হয়। Information হলেও ব্যবহারের উপযোগী। অর্থাৎ এটি প্রক্রিয়াজাত তথ্যের ফলাফল।

C) ডাটা প্রসেসিং চক্র (data processing cycle)

ডাটা থেকে ইনফর্মেশন পেতে হলে চারটি ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একে ডাটা প্রসেসিং চক্র বলে। নিচে এই ধাপ গুলি টেপ বাই স্টেপ উল্লেখ করা হলো –

i) তথ্য সংগ্রহ ( data collection)

এই ধাপে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রসেসিং সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য বা মূল ডাটাগুলি (Raw data) সংগ্রহ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট স্থানে এই সংগ্রহীত ডাটা গুলিকে একত্রিত করা হয়, অর্থাৎ কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার জন্য ডাটা গুলিকে প্রস্তুত করা হয়।

ii) ইনপুট (input)

এটি হলো তথ্য সংগ্রহের পরবর্তী ধাপ। এই ধাপে ইনপুটের জন্য সংগ্রহিত ও একত্রিত তথ্যগুলিকে কম্পিউটারে ইনপুট হিসেবে প্রবেশ করানো হয়।

iii) প্রসেসিং (processing)

যে সকল প্রাথমিক ও অসংগঠিত তথ্য কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয়, সেই তথ্য গুলির সঙ্গে আরও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য তথ্য যুক্ত করে, অসংগঠিত তথ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় এবং ব্যবহারযোগ্য অর্থবহ তথ্যে বা ইনফর্মেশনে পরিণত করা হল এই ধাপের কাজ।

iv) আউটপুট (Output)

শেষ ধাপে প্রসেসিং থেকে প্রাপ্ত ফলাফল কে আউটপুট বলে। অর্থাৎ কম্পিউটারে ইনপুট দেওয়ার পরে ওগুলি প্রক্রিয়াকরণ হয়ে যে অর্থবহ তথ্য প্রদান করে তাই হল আউটপুট। ইনপুট ডাটার ওপরে নির্ভর করে, যে আউটপুট ডাটা কি ধরনের হবে। প্রসেসিং এর পর বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা আউটপুট পেতে পারি। যেমন- মনিটরের মাধ্যমে ডিসপ্লেতে, প্রিন্টারের মাধ্যমে কাগজে প্রিন্ট, অথবা স্পিকারের মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করিয়ে, ইত্যাদি।

D) ডাটা এবং ইনফর্মেশনের মধ্যে পার্থক্য

ডাটা (Data)ইনফর্মেশন(Information)
ডাটা হল মজুদকৃত ঘটনা সমূহ। ডাটা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয়।ইনফর্মেশন হল উপস্থাপিত ঘটনাবলী। অর্থাৎ তথ্যগুলিকে প্রক্রিয়াকরণের পরের বিষয়।
ডাটা হল কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু এবং সংস্থা ইত্যাদির যেকোনো বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য।ইনফর্মেশন হল ডাটাকে বিশ্লেষণ বা প্রসেস করার পর অর্থবহ তথ্য।
ডাটা হল নিষ্ক্রিয় অর্থাৎ ডাটা সংগ্রহকারীদের কর্মে উৎসাহিত বা প্রবৃত্ত করে না।ইনফর্মেশন হল সক্রিয়, কারণ এগুলি কাজ করতে সমর্থ করে।
ডাটা হল কম্পিউটারে প্রসেস বা বিশ্লেষণ হওয়ার আগের তথ্য। যেমন- ছাত্রের নাম, ক্রমিক নম্বর ও মার্কস ইত্যাদি।ইনফর্মেশন হল কম্পিউটারে প্রসেস বা বিশ্লেষণ হওয়ার পরের তথ্য। যেমন- ছাত্রটির রেজাল্ট।
ডাটা হল ইনপুট বিষয়।অপরপক্ষে ইনফর্মেশন হল আউটপুট বিষয়
অর্থহীন ঘটনা হল ডাটা।অর্থযুক্ত ঘটনা হল ইনফর্মেশন।
ডাটা কতকগুল কতকগুলি বিচ্ছিন্ন তথ্য, যা থেকে কোন কিছু সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় না।ইনফর্মেশন এর উপর ভিত্তি করে কোন কিছু সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া সম্ভব।
ডাটা সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ, ব্যয়সাপেক্ষ, কিছু ক্ষেত্রে শ্রম সাপেক্ষেও বটে।ডাটা প্রস্তুত থাকার থাকার ফলে ইনফর্মেশন কম ব্যয়সাপেক্ষ, এবং ইনফর্মেশন প্রস্তুতিতে সময় ও শ্রম অনেক কম লাগে।

FAQ

ডাটা কি?

যেকোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য যে সমস্ত কাঁচা তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাই হল ডাটা। যেমন- শিক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ।

ইনফর্মেশন কি?

বিভিন্ন কাঁচা তথ্য গুলিকে প্রসেসিং করার পর যে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় তাই হল ইনফর্মেশন। যেমন- শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *