বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম যেমন C ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে কম্পিউটারকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু C ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম লেখার জন্য একজন প্রোগ্রামারকে প্রচুর পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়। কারণ C-তে প্রোগ্রাম লিখতে গেলে শতাধিক ফাংশন ও প্রোগ্রাম বিধি মেনে প্রোগ্রাম লিখতে হয়। তাই C প্রোগ্রামিং একজন শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামারের পক্ষে রপ্ত করা খুবই কঠিন।

এই প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে 1964 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ (Dartmouth) কলেজের দুজন অধ্যাপক জন.জি. কেমেনি (John G. Kemany) ও টমাস ই.কার্টজ (Thomas E. Kertz) BASIC Beginners All purpose Symbolic Instruction Code নামে একটি ল্যাঙ্গুয়েজ বা ভাষার প্রবর্তন করেন। BASIC ল্যাঙ্গুয়েজে অল্প কমান্ড ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রোগ্রাম লেখা যায়। 

কিন্তু এর প্রধান অসুবিধা হল এই l শুধুমাত্র কমান্ড ইউজার ইন্টারফেস (CUI) ব্যবহার করে কিন্তু ভিস্যুয়াল এফেক্টগুলি ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। এই অসুবিধাগুলি দূর করার জন্য পরবর্তীকালে Microsoft Corporation একটি Object Oriented Programming Language আবিষ্কার করে। যার নাম Visual Basic।

 সুতরাং BASIC-এর আধুনিক সংস্করণ হল Visual Basic, যেটি গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এটি শিক্ষানবিশ প্রোগ্রামারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

👉 ভিস্যুয়াল বেসিক-এর জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার (Minimum Hardware and Software Requirement of Visual Basic)

ভিস্যুয়াল স্টুডিয়ো (Visual Studio) গ্রুপের একটি অংশ ভিস্যুয়াল বেসিক 6.0, ভিস্যুয়াল স্টুডিয়ো গ্রুপের অন্তর্গত যে সমস্ত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে সেগুলি হল – Visual Basic, Visual FOXPRO, C++, Visual InterDev ইত্যাদি।

 সুতরাং ভিস্যুয়াল বেসিক 6.0 চালাতে গেলে ভিস্যুয়াল স্টুডিয়ো 6.0 সফ্টওয়্যারটি কম্পিউটারে লোড (Install) করতে হবে। ভিস্যুয়াল স্টুডিয়ো 6.0 লোড করতে গেলে কম্পিউটারের ন্যূনতম Configuration পেন্টিয়াম-1, 64 MB RAM, 600 MB হার্ডডিস্ক, রঙিন মনিটর, SVGA ডিসপ্লে, মাউস ও সিডি বা ডিভিডি রম ড্রাইভ ইত্যাদি প্রয়োজন।

👉 ভিস্যুয়াল বেসিক প্রোগ্রামিং-এর সুবিধা এবং অসুবিধা (Advantages and Disadvantages of Visual Basic)

✍️ ভিস্যুয়াল বেসিকের সুবিধা (Advantages of Visual Basic )

  • (i) ভিস্যুয়াল বেসিকের সাহায্যে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের ইন্টারফেস তৈরি করা যায়।
  • (ii) বিভিন্ন ধরনের ফাইল, যেমন—টেক্সট, বাইনারি ও ডাটাবেস ফাইল নিয়ে কাজ করা যায়।
  • (iii) ডাটাবেস ফাইল নিয়ে সরাসরি কাজ করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা যায়।
  • (iv) গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা যায়।
  • (v) বিভিন্ন ধরনের উইন্ডোস অ্যাপ্লিকেশন বা সফ্টওয়্যার তৈরি করা যায়।

✍️ ভিস্যুয়াল বেসিকের অসুবিধা (Disadvantages of Visual Basic)

  • (i) ভিস্যুয়াল বেসিক প্রোগ্রামগুলি বেশি গ্রাফিক্যাল হওয়ার ফলে কম মেমোরিযুক্ত মেশিনে চলে না।
  •  (ii) ভিস্যুয়াল বেসিকের জন্য উচ্চতর Configuration-এর মেশিন প্রয়োজন।
  • (iii) ভিস্যুয়াল বেসিক কেবলমাত্র Graphical User Interface (GUI) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমেই (যেমন—উইন্ডোস) চালানো যায়।

👉 ভিস্যুয়াল বেসিক চালু করার ধাপসমূহ (Starting Visual Basic)

(i) প্রথমে Start বাটনে ক্লিক করে Programs/All Programs অপশনে মাউস পয়েন্টার রাখলে যে অপশনগুলি দেখা যায় সেখান থেকে Micro-soft Visual Studio 6.0 তে মাউস পয়েন্টার রাখতে হবে (চিত্র 5.1)।

(ii) এরপর Visual Microsoft Basic 6.0 অপশনে ক্লিক করতে হবে।

চিত্র 5.1 : ভিস্যুয়াল বেসিক স্টার্ট-প্রোগ্রাম (oibe 

(iii) স্ক্রিনে Microsoft Visual Basic-এর একটি প্রোজেক্ট উইন্ডো প্রদর্শিত হবে। (চিত্র 5.2)।

(iv) এখান থেকে New ট্যাবের অন্তর্গত Standard EXE আইকন সিলেক্ট করে Open বাটন ক্লিক করতে হবে।

(v) ভিস্যুয়াল বেসিকের IDE স্ক্রিনে দেখা যাবে (চিত্র 5.3 ) ।

চিত্র 5.3 : ভিস্যুয়াল বেসিক 6.0-এর বিভিন্ন অংশের চিহ্নিতকরণ

👉 ভিস্যুয়াল বেসিকে বিভিন্ন প্রোজেক্ট-এর ধরন নির্ধারণ (Specify different Project Types in Visual Basic)

ভিস্যুয়াল বেসিকে বিভিন্ন ধরনের প্রোজেক্ট (যেমন – Standard EXE, Active X EXE, Active DLL, Active X Control ইত্যাদি) অপশন পাওয়া যায়। New Project ডায়লগ বক্স থেকে সঠিক প্রোজেক্টটি ঠিক করতে হবে কারণ প্রোজেক্ট সিলেকশন ভুল হলে Project থেকে কখনও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।

নীচে ভিস্যুয়াল বেসিকের বিভিন্ন প্রোজেক্টের ধরন ও তার কার্যকারিতা আলোচনা করা হল।

✍️ Standard EXE :- এই ধরনের প্রোজেক্টের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের প্রোজেক্ট ভিস্যুয়াল বেসিকে তৈরি করা যায়। এতে ভিস্যুয়াল বেসিকের Standard প্রায় সব ধরনের কন্ট্রোল ব্যবহার করার সুযোগ পাওয়া যায়। 

Standard EXE প্রোজেক্টে বেশ কিছু ফাইল ও অবজেক্ট ধারণ করতে পারে, তাই একটি প্রোজেক্ট থেকে আমরা অনেক বড়ো প্রোজেক্ট তৈরি করতে পারি। এই কারণগুলির জন্য Windows ভিত্তিক প্রধান প্রোজেক্টগুলি Standard EXE প্রোজেক্টের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।

✍️ Active X EXE :- অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে প্রয়োগ করার উপযোগী Active X ফাইল তৈরি করতে Active X EXE প্রোজেক্ট ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া ইন্টারনেটভিত্তিক প্রোজেক্ট তৈরি করতে Active X DLL, ActiveX Control, VB Application Wizard, Data Project, IIS Application, Active X Document DLL ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

👉 ভিস্যুয়াল বেসিক উইন্ডোর পরিচয় ( Getting Familiar with Visual Basic Window)

ভিস্যুয়াল বেসিকের New Project ডায়ালগ বক্সের অন্তর্গত Standard EXE প্রোজেক্ট-এ মাউস ক্লিক করলে ভিস্যুয়াল বেসিক উইন্ডো বা Integrated Development Environment (IDE) বিভিন্ন উপাদান বা অংশগুলি দেখা যায়। নীচে তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল—

✍️ মেনুবার ও পুল ডাউন মেনু (Menubar & Pull Down Menu)

ভিস্যুয়াল বেসিক উইন্ডোতে টাইটেল বারের নীচে File, Edit, View, Project, Format, Debug ইত্যাদি লেখা যে বারটি থাকে, তাকে মেনুবার (Menubar) বলে। মেনুবার-এর বিভিন্ন মেনুগুলিতে অনেকগুলি সাবমেনু থাকে যাদের মাউস পয়েন্টার দ্বারা ক্লিক করলে মেনুর অন্তর্গত যে ড্রপ ডাউন লিস্ট দেখা যায় তাকে পুল ডাউন মেনু বলা হয়।

✍️ টুলবার (Toolbar )

মেনুবারের নীচে বিভিন্ন আইকন সংবলিত যে বার থাকে তাকে টুলবার বলে। টুলবারের প্রতিটি আইকনকে টুল বলা হয়। টুলবারের সুবিধা হল, মেনুর অন্তর্গত প্রয়োজনীয় কমান্ড অপশন সিলেক্ট করে কাজ করার পরিবর্তে সরাসরি টুলবারের টুলগুলিকে ক্লিক করে দ্রুত কাজ করা যায়। 

ভিস্যুয়াল বেসিকে ব্যবহৃত টুলবারের  5.6-এ দেখানো হল।

✍️  টুলবক্স (Toolbox )

ভিস্যুয়াল বেসিক Integrated Development Environment-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল টুলবক্স। টুলবক্স বামদিকে অবস্থান করে। ভিস্যুয়াল বেসিক প্রোগ্রামে ইউজার ইন্টারফেস (User Interface) তৈরির যাবতীয় কন্ট্রোলগুলি এই টুলবক্সে থাকে। টুলবক্স-এর কন্ট্রোলগুলিকে ক্লিক করে অথবা ড্রাগ করে ফর্মের উপর নিয়ে আসা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী টুলবক্সে আরও কন্ট্রোল সংযোজন করা যায়।

Pointer – Pointer টুলবক্সের মধ্যে থাকলেও এটি কোনো কন্ট্রোল নয়। এটির সাহায্যে ফর্মের উপরের কন্ট্রোলগুলি স্থান পরিবর্তন, সাইজ পরিবর্তন  ইত্যাদিতে সাহায্য করে।

PictureBox – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে ছবি বা ইমেজ প্রদর্শন করা হয়। 

Label (A) – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে লেখা বা টেক্সট প্রদর্শন করা হয়। এই কন্ট্রোলে প্রদর্শিত টেক্সটকে এডিট করা যায় না।

TextBox (ab) – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে সাধারণত ইনপুট গ্রহণ করা হয়। তবে এটির মাধ্যমে টেক্সট প্রদর্শনও করা যায়।

Frame – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে বিভিন্ন কন্ট্রোলগুলির মধ্যে গ্রুপ তৈরি করা হয়।

Command Button – এই কন্ট্রোলটি বাটন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকারীরা বাটনে ক্লিক করে কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে। প্রোগ্রামে OK, YES, NO, EXIT এই ধরনের যে বাটনগুলি আমরা দেখতে পাই সেগুলি হল কমান্ড বাটন।

Check Box – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে ফর্মের কোনো নির্দিষ্ট উপাদানকে Checked অথবা Unchecked করা হয়। Checked বলতে সিলেক্ট হওয়া বোঝায় এবং Unchecked বলতে সিলেক্ট না হওয়া বোঝায়।

Option Button – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে একাধিক অপশনের মধ্যে একটি অপশনকে বেছে নেওয়া যায়। এই কন্ট্রোলকে Radio Button-ও বলা হয়।

List Box – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে একাধিক আইটেমকে লিস্টের আকারে প্রদর্শন করা হয়।

Combo Box – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে একাধিক আইটেমকে ছোটো লিস্টের আকারে প্রদর্শন করা হয়।

HScroll Bar – এটি অনুভূমিক (Horizontal) স্ক্রলবার কন্ট্রোল।

VScroll Bar – এটি উল্লম্ব (Vertical) স্কুলবার কন্ট্রোল। 

Timer – এটি অভ্যন্তরীণ গণনার কাজে ব্যবহৃত হয়।

Drive List Box – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে সিস্টেম ডিস্ক ড্রাইভ (C:, D: ইত্যাদি) অ্যাকসেস করা হয়।

Dir List Box – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে ডিরেক্টরি অ্যাকসেস করা হয়।

File List Box – কোনো ডিরেক্টরির মধ্যে থেকে ফাইল অ্যাকসেস করার কাজে এই কন্ট্রোলটি ব্যবহৃত হয়।

Shape – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে circle, rectangle, square, ellipse ইত্যাদি আঁকা যায়।

Line – এই কন্ট্রোলটি লাইন আঁকার কাজে ব্যবহৃত হয়।

Image – ছবি বা Image প্রদর্শন করতে এই কন্ট্রোলটি ব্যবহৃত হয়। 

Date – এটার সাহায্যে user কোনো Database এর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে এবং তার থেকে তথ্য প্রদর্শন করতে পারে।

OLE – এই কন্ট্রোলের সাহায্যে অন্যান্য উইন্ডোস অ্যাপ্লিকেশনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *