📝 আউটপুট ইউনিট/ডিভাইস (output device in comput)
আউটপুট ইউনিটের মাধ্যমে আমরা কম্পিউটারের সমস্ত রকম কাজ এবং তার ফলাফল দেখতে পাই। সি.পি.ইউ-এর কন্ট্রোল ইউনিট থেকে প্রাপ্ত নির্দেশকেই আউটপুট ইউনিট পালন করে। মনিটরের পর্দায় যে ছবি বা ফলাফল ইত্যাদি দেখতে পাওয়া যায় সেগুলিকে সফ্ট কপি (Soft Copy) বলে।
সুতরাং যে সমস্ত ডিভাইস গুলির সাহায্যে আমরা ইনফরমেশনগুলি জানতে পারি সেগুলিকে আউটপুট ডিভাইস বলা হয়ে থাকে। এই আউটপুট আমরা ছবির মাধ্যমেও পেতে পারি, আবার লেখার মাধ্যমে পেতে পারি, এমনকি শব্দের মাধ্যমেও পেতে পারি (output device definition)।
কম্পিউটারের আউটপুট ডিভাইসগুলি হল (output device in comput) :~
ইনপুট ডিভাইসের মতো অনেক ধরনেরই আউটপুট ডিভাইস রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের আউটপুট ডিভাইস উদাহরণ সহ (output device name) এবং এদের বিভাগগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
👉 (1) মনিটর (Monitor) বা ভিস্যুয়াল ডিসপ্লে ইউনিট (Visual Display Unit) :
machine output number of information to organise report হল মনিটরের ফুল ফর্ম ( monitor full form )। কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট ডিভাইস হল মনিটর। এটি দেখতে টিভির মতো। এই যন্ত্রটি টেক্সট ও ছবি উভয় প্রকার আউটপুট দেখাতে পারে (monitor meaning)।
👉 বর্ণগত দিক থেকে মনিটর দুই রকমের-
- (i) সাদাকালো বা মনোক্রোম মনিটর (Monochrome Monitor);
- (i)কালার মনিটর (Colour Monitor)।
মনিটরের রেজোল্যুশন কমানো বা বাড়ানো যায়। রেজোল্যুশন কমালে ছবির স্পষ্টতা (Sharpness) কমে এবং রেজোল্যুশন বাড়ালে ছবির স্পষ্টতা বাড়ে। রেজোল্যুশন বলতে সাধারণত পিক্সেলের সংখ্যাকে বোঝায়।
পিক্সেল হল মনিটর বা সমগোত্রীয় কোনো ডিসপ্লে ডিভাইস-এ প্রদর্শিত একটি ইমেজ বা ছবির ক্ষুদ্রতম একক) মনিটরের পর্দায় উল্লম্ব সারির পিক্সেল সংখ্যা ও অনুভূমিক সারির পিক্সে সংখ্যার উপর ভিত্তি করে টেক্সট বা গ্রাফিক্স প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে মনিটরগুলির স্ক্রিন বিভিন্ন মাপের হয়ে থাকে। যেমন— 14”, 15, 17, 18.5″, 19”, 21”, 24” ইত্যাদি।
👉 গঠনগত দিক থেকে মনিটর চার রকমের
(i) CRT মনিটর (CRT Monitor) :–
এই ধরনের মনিটরআকার ও আকৃতির অনেকটা টেলিভিশন বা টিভির মতো। এইধরনের মনিটরের প্রধান উপাদান ক্যাথোড রে টিউব বা CRT |এই ধরনের মনিটরগুলি আকারে বড়ো হয়। এর প্রধান বর্ণ বা রং লাল, সবুজ ও নীল। এই রংগুলি নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন অনুপাতে মিশে অসংখ্য রঙের সৃষ্টি করে। তাই এই মনিটরকে রঙিন মনিটর বলা হয়।
কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সি.পি.ইউ-র আউটপুট সিগন্যাল ইলেকট্রন গানের মধ্য দিয়ে CRT-এর পিক্চার টিউবের পর্দায় দেখা যায়। এ ছাড়া CRT-এর সঙ্গে যুক্ত বিশেষ ইলেকট্রনিক সার্কিট কম্পিউটার | ইনপুট সিগন্যালকে স্ক্রিনে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা রেখেছে। ফলে কীবোর্ড থেকে কিছু টাইপ করে ইনপুটে জানানো হয়, সেটা স্ক্রিনে দেখা যায়। অর্থাৎ CRT ইনপুট সিগন্যালের প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়ে থাকে। এই বিশেষ ব্যবস্থার জন্যই এর নাম মনিটর (Monitor) হয়েছে।
(ii) LCD মনিটর (LCD মনিটর) :–
LCD full form হল Liquid-crystal display. এই মনিটরগুলিতে ক্যাথোড রে টিউব না থাকায় এই মনিটরগুলি পাতলা ও হালকা এবং জায়গাও কম লাগে। তা ছাড়া CRT মনিটরের তুলনায় LCD মনিটরে বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়।
LCD মনিটরের প্রধান উপাদান হিসাবে লিক্যুইড ক্রিস্টাল নামে এক ধরনের বিশেষ মলিকিউল ব্যবহৃত হয়। লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে বহিরাগত আলোক উৎসবের উপর নির্ভরশীল। তাইএই ডিসপ্লেগুলি সীমিত কোণ (Limited angle) থেকে দৃশ্যমান হয়।
এই ধরনের মনিটরের স্ক্রিনে তিন ধরনের ডট বা বিন্দু মিলিত হয়ে পিক্সেল (Pixel) গঠন করে। বিন্দুগুলি থেকে লাল, সবুজ ও নীল রঙের আলো নির্গত হয়। স্ক্রিনের পিক্সেলগুলি নির্দিষ্ট বর্ণে আলোকিত হয়ে মনিটরে প্রদর্শিত হয়। পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পামটপ, নোটবুক ইত্যাদি কম্পিউটারে এই মনিটরের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।
(iii) প্রোজেকশন ডিসপ্লে (Projection Display) :–
এই ধরনের মনিটর বড়ো হলঘরে ডিসপ্লের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেখানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে কোন কিছুকে দেখানো হয়ে থাকে। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রচলন বেড়েছে।
(iv) LED মনিটর (LED Monitor) :–
এই ধরনের মনিটর লাইট এমিটিং ডায়োড ছবি (LED) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হয়।
(2) প্রিন্টার (Printer) :
প্রিন্টার কম্পিউটারের একটি প্রধান ও উল্লেখযোগ্য আউটপুট ডিভাইস। প্রিন্টার কম্পিউটারের আউটপুট সাদা কাগজে ছেপে প্রকাশ করে। সাদা কাগজে প্রিন্ট করাকে হার্ড কপি (Hard Copy) বলে। বিভিন্ন রকম প্রিন্টারের সাহায্যে আমরা সাদা কালো এবং রঙিন দুই ধরনের প্রিন্টই করতে পারি। প্রিন্টার সাধারণত দুই প্রকার—ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার ও নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার।
(i) ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Impact Printer) –
এই ধরনের প্রিন্টার তথ্য প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টার হেড কাগজকে স্পর্শ করে। তাই ঘর্ষণের ফলে শব্দের সৃষ্টি হয়। এই ধরনের প্রিন্টারে কালিযুক্ত রিবন বা ফিতা ব্যবহৃত হয়। প্রিন্টার হেড অনেকগুলি ধাতব পিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এই ধরনের প্রিন্টারগুলি টাইপরাইটারের মতো কাজ করে। যেমন—ডটম্যাট্রিক্স, লাইন প্রিন্টার, ডেইজি হুইল প্রিন্টার ইত্যাদি।
(a) ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার (Dot Matrix Printer) :-
এটি একটি ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার। এই ধরনের প্রিন্টারের প্রিন্ট হেডে একগুচ্ছ পিন থাকে, অনেকটা টাইপ রাইটারের মতো। প্রিন্ট করার সময় ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারের হেড কালিযুক্ত রিবনের ওপর আঘাত করে কাগজের ওপর প্রয়োজনীয় অক্ষর ফুটিয়ে তোলে।
প্রিন্ট হেড-এ ম্যাট্রিক্স পদ্ধতিতে অনেকগুলি পিন থাকে, এই পিনগুলি আসলে সরু ধাতব রড, পিনগুলি রিবনে আঘাত করে কাগজে ডট বা বিন্দু তৈরি করে ক্যারেক্টার বা গ্রাফিক্স প্রিন্ট করে, ফলে যে অক্ষরগুলি তৈরি হয় তার প্রিন্ট কোয়ালিটি খুব পরিষ্কার নয়। এই প্রিন্টারে প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টার-এর হেড কাগজ স্পর্শ করায় ঘর্ষণজনিত শব্দ উৎপন্ন হয়। এই ধরনের প্রিন্টারগুলিতে প্রিন্টের খরচ খুব কম।
(ii) নন-ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার (Non-Impact Printer):-
এই ধরনের প্রিন্টারগুলি প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টার হেড কাগজকে স্পর্শ করে না, তাই এই ধরনের প্রিন্টারে প্রিন্ট করার সময় কোনো ঘর্ষণজনিত শব্দ উৎপন্ন হয় না। এই ধরনের প্রিন্টারের মাধ্যমে উচ্চমানের প্রিন্ট পাওয়া যায় এবং এই ধরনের প্রিন্টারগুলি দ্রুতগতিতে প্রিন্ট করতে পারে। এই ধরনের প্রিন্টারে স্পষ্ট ও রঙিন আউটপুট পাওয়া যায় কিন্তু প্রিন্টারের কালির দাম বেশি হওয়ায় ছাপানোর খরচ বেশি হয়।
(a) ইঙ্কজেট প্রিন্টার (Inkjet Printer) :-
ইঙ্কজেট প্রিন্টারে তরল কালি ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্রিন্টারে দুই প্রকার কার্টিজ ব্যবহার করা হয়। একটি কার্টিজে থাকে কালো কালি এবং অপর কার্টিজে লাল (red), সবুজ (green) ও নীল (blue) কালি থাকে। কার্টিজগুলির নীচে সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত নজেল বা নল থাকে। সেই ছিদ্র দিয়ে কালি স্প্রের মাধ্যমে বিভিন্ন অক্ষর বা ছবি প্রিন্ট হয়।
একটি গরম রোলারের সাহায্যে কাগজের কালি শুকানো হয়। প্রিন্ট করার সময় কাগজের ওপর কোনোরূপ ঘর্ষণ না হওয়ায় ফলে প্রিন্টের সময় কোনো শব্দ সৃষ্টি হয় না। ইঙ্কজেট প্রিন্টারে ছাপার মান খুবই ভালো এবং ক্যাপ্রিন্টারের দাম কম হওয়ায় স্কুল-কলেজ, বাড়িতে ও বিভিন্ন সংস্থায় এই প্রিন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
(b) লেজার প্রিন্টার (Laser Printer) :-
লেজার প্রিন্টারের কার্যপদ্ধতি অনেকটা জেরক্স মেশিনের মতো। এই মেশিনের কালি কার্বন গুঁড়োর মতো এবং কালি টোনারের ভেতরে থাকে। প্রিন্টারের ড্রামের ভেতর দিয়ে যখন কাগজটি পাস করে তখন টোনারের কালির সাহায্যে কাগজে ছবি বা লেখা প্রিন্ট হয়। লেজার প্রিন্টারের সাহায্যে দ্রুতগতিতে প্রিন্ট করা যায়।
সাধারণত গড়ে প্রতি মিনিটে 6 – 12 টি পেজ প্রিন্ট করা যায়। টেক্সট বা ছবি যে-কোনো প্রিন্টের মান খুব উন্নত মানের হয়। লেজার প্রিন্টারে ছাপানোর খরচ কম এবং প্রিন্টারগুলিতে প্রিন্টের সময় কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না।
(c) প্লটার (Plotter) :
প্লটার প্রিন্টারের মতো আর-একটি আউটপুট ডিভাইস যেটি সাধারণত বড়ো সাইজের ছবি প্রিন্ট করার কাজে ব্যবহার করা হয়। প্লটারের প্রিন্ট হেড-এ একাধিক কালিযুক্ত পেন (ink pens) থাকে। সেগুলি কালার কার্টিজের সঙ্গে যুক্ত থাকে।
এই কালিযুক্ত পেনগুলির সাহায্যে প্লটার প্রিন্ট করে। বিভিন্ন ভৌগোলিক মানচিত্র, আবহাওয়া সংক্রান্ত মানচিত্র, ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং, বিজ্ঞাপনের পোস্টার, হোর্ডিং প্রিন্ট ইত্যাদির কাজে প্লটার ব্যবহার করা হয়।
কার্যপ্রণালীর উপর ভিত্তি করে প্লটারকে চারভাগে ভাগ করা যায়। ভাগগুলি হল-
- (i) ড্রাম প্লটার (Drum Plotter )
- (ii) ফ্ল্যাটবেড প্লান্টার (Flatbed Plotter )
- (iii) ইঙ্কজেট প্লটার (Inkjet Plotter )
- (iv) ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্লটার (Electrostatic Plotter )