আন গাইডেড মিডিয়া (Un Guided Media) :
আনগাইডেড মিডিয়া বা বেতার মাধ্যমে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (Electromagnetic) তরঙ্গকে কোনো রকম তার মাধ্যমে সাহায্য ছাড়া তথ্য প্রেরণ করতে সক্ষম।
LAN ও MAN-এর ক্ষেত্রে তারের সাহায্যে ডেটা পাঠানো সম্ভব হলেও WAN-এর মতো পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে বেতার মাধ্যম ও তারযুক্ত মাধ্যম উভয়েই প্রয়োজন হয়।

বেতার মাধ্যম বিভিন্ন ধরণের হয়। যেমন:-
- ইনফ্রারেড তরঙ্গ,
- রেডিও তরঙ্গ,
- মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ
- স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম ইত্যাদি।
1) ইনফ্রারেড তরঙ্গ (Infrared Wave) :
যে সকল তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 300 GHz থেকে 400 THz (Terahertz)-এর মধ্যে হয়, তাকে ইনফ্রারেড তরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গকে অল্প দূরত্বে বেতার মাধ্যমে সংকেত আদান-প্রদান করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
সংকেত আদান-প্রদানের কাজটি LED (Light Emitting Diode) বা ILD (Interjection Laser Diode)-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই স্বল্প দূরত্বের বেতার মাধ্যম একটি ঘরের মধ্যে অবস্থিত কোনো সিস্টেমকেই শুধু প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু তার পাশের ঘরে অবস্থিত কোনো সিস্টেমকে প্রভাবিত করে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইনফ্রারেড তরঙ্গ ব্যবহার করে রিমোট-এর দ্বারা TV চ্যানেলকে পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু প্রতিবেশীর টিভিতে-এর কোনো প্রভাব পড়ে না। তাই বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে এটি অচল। এই তরঙ্গের ব্যবহার TV, VCD, কম্পিউটার (রিমোট মাউস ও কি-বোর্ড) ও মিউজিক সিস্টেম, নাইট ভিশন ক্যামেরায় এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়।
2) রেডিও তরঙ্গ (Radio Wave) :
যদিও মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ এবং রেডিও ওয়েভ তরঙ্গের কোনো সীমারেখা নেই তবুও যে সমস্ত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 3KHz থেকে 1GHz এর মধ্যে হয় তাকে রেডিও তরঙ্গ বলা হয়। রেডিও তরঙ্গের ওমনি ডাইরেকশনাল (Omnidairectional) এন্টেনা ব্যবহার করা হয়।
এটি সব দিকেই সংকেত পাঠাতে পারে। যখন প্রেরক এন্টেনা তরঙ্গ পাঠায় তখন যে কোনো গ্রাহক এন্টেনা দ্বারাই সেই তরঙ্গ গৃহীত হয়। রেডিও তরঙ্গের ক্ষেত্রে অসুবিধা হল আবহাওয়ার কারণে ও বাতাসের অন্যান্য তরঙ্গের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে, ফলে সংকেত বাউল (Signal Bounce) হতে পারে।
এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। এর ব্যবহার AM ও FM রেডিও, টেলিভিশন, কর্ডলেস ফোন ইত্যাদিতে হয়।
3) মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ (Microwave Wave) :
যে সকল ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের কম্পাঙ্ক 1GHz থেকে 300 GHz পর্যন্ত হয় তাকে মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ বলে। এই তরঙ্গ খুবই উচ্চ কম্পাঙ্কের হওয়ার জন্য এটি বাঁকতে পারে না। তাই এটি সর্বদা সরলরেখা বরাবর যায়। এক্ষেত্রে ইউনি ডাইরেকশনাল এন্টেনা ব্যবহার করা হয়।

এটি উচ্চ বাড়ী, পাহাড় ইত্যাদির দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়, তাই এর এন্টেনাসহ টাওয়ারগুলিকে খুবই উচুতে স্থাপন করা হয়। তবে এই তরঙ্গ অনেক অনেক দুরত্ব পর্যন্ত গেলে সংকেত ক্রমশ ক্ষীন বা দুর্বল হয়ে পড়ে তাই টাওয়ারগুলিতে রিপিটারের ব্যবস্থা থাকে যা দুর্বল সংকেতগুলিকে যথেষ্ট জোরালো করে।
মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ মূলতঃ সেলুলার ফোন, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম এবং ওয়্যারলেস LAN সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়।
4) স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম (Satellite Network System) :
তথ্য প্রেরণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সিস্টেম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমি স্টেশন থেকে ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে তথ্য সংকেত উপগ্রহে পাঠানোকে আপলিংক বলে।
একইভাবে উপগ্রহ থেকে ওই তথ্য সংকেত ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমি স্টেশনে পুনরায় ফিরে আসার পদ্ধতিকে ডাউন লিংক বলে।
বিভিন্ন কক্ষপথে আমরা তিন ধরনের উপগ্রহকে ঘুরতে দেখি। সেগুলি হল :
- (a) Geostationary Earth Orbit (G.E.O.),
- (b) Low Earth Orbit (L.E.O.),
- c) Middle Earth Orbit (M.E.O.)
(a) Geostationary Earth Orbit :
যে সমস্ত উপগ্রহের গতি পৃথিবীর গতির প্রায় সমান এবং পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে দেখলে এই সমস্ত উপগ্রহকে আপাত দৃষ্টিতে স্থির বলে মনে হয় সেই সমস্ত উপগ্রহকে Geostationary উপগ্রহ বলা হয়। এরজন্য এই উপগ্রহগুলিকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে নিরক্ষরেখা বরাবর প্রায় ২২ হাজার মাইল উচ্চতায় স্থাপন করতে হয়। Geostatinary উপগ্রহগুলি সম্পূর্ণ পৃথিবীকে Cover করতে পারে না। সমগ্র পৃথিবীকে Cover করতে ৩ থেকে ৪টি উপগ্রহের প্রয়োজন হয়। ভারতের INSAT1B হল Geostationary উপগ্রহের উদাহরণ।
(b) Medium Earth Orbit :
Medium Earth Orbit (MEO) দুটি Van-Allen belts-এর মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থান করে। এই উপগ্রহের একটি উদাহরণ হল আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তর দ্বারা তৈরি Global Positioning System (G.P.S.)। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ হাজার কিমি উচ্চতায় স্থাপিত। এই সিস্টেম ২৪টি উপগ্রহের দ্বারা তৈরি এবং চটি কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। এটি বাতাসের দিক নির্ণয় করতে, বিভিন্ন যানবাহন ও জাহাজের অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়।
(c) Low Earth Orbit :
Low Earth Orbit উপগ্রহগুলি মেরু কক্ষে স্থাপন করা হয়। উপগ্রহগুলি পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার কিমি উচ্চতায় স্থাপন করা হয়।