একটি নেটওয়ার্কে অবস্থিত কম্পিউটারগুলি যে পদ্ধতিতে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করে তাকে নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি (Network Configuration) বলে। নেটওয়ার্কের আকার, কম্পিউটার-এর ধরন, নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে নেটওয়ার্কের প্রযুক্তি তৈরি হয়। নেটওয়ার্কে অবস্থিত কম্পিউটারগুলি নিজেদের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করে দুটি পদ্ধতিতে—

  • A. ক্লায়েন্ট/সার্ভার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি
  • B. পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি।

✍️ A. ক্লায়েন্ট/সার্ভার নেটওয়ার্ক (Client/Server Network)

ক্লায়েন্ট/সার্ভার নেটওয়ার্কে এক বা একাধিক শক্তিশালী কম্পিউটার থাকে যাকে সার্ভার (Server) বলা হয়। অন্যান্য সমস্ত কম্পিউটার বা নোড এই সার্ভার-এর সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং তাদেরকে ক্লায়েন্ট বলে।

Network Configuration
Photo from Modern Computer Application book by Anupam

সার্ভার হল শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কম্পিউটার যার মূল কাজ হল নেটওয়ার্কে উপস্থিত অন্যান্য ক্লায়েন্ট কম্পিউটারগুলিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডাটা সাপ্লাই দেওয়া। তবে এই ডাটা ব্যবহারের জন্য ক্লায়েন্ট কম্পিউটারগুলির সার্ভার-এর কাছ থেকে অনুমতি লাগে এবং এর জন্য ক্লায়েন্ট কম্পিউটারগুলির নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ও পাশওয়ার্ড থাকে। 

এই নেটওয়ার্কে সার্ভার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন—ওয়েব সার্ভার, অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার, মেল সার্ভার, ফাইল সার্ভার, প্রিন্ট সার্ভার ইত্যাদি।

এই নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট কম্পিউটারগুলি কম শক্তিশালী PC বা ওয়ার্কস্টেশন হলেও চলে কিন্তু সার্ভারটি শক্তিশালী কম্পিউটার বা প্রসেসর হওয়া প্রয়োজন যেগুলি নেটওয়ার্কে ক্লায়েন্টদেরকে ডাটা এবং সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সংস্থান (resource) গুলিকে ভাগাভাগি (Share) করার সুযোগ করে দেয়।

 👉 তথ্য আদানপ্রদান

এইরূপ মডেলে সার্ভার তথ্য সরবরাহ করে নেটওয়ার্ক চ্যানেলের মাধ্যমে যা ক্লায়েন্টদের কাছে পৌঁছে যায়। এই মডেলে যোগাযোগ হয় সাধারণত অনুরোধ মেসেজ ( request message)-এর মাধ্যমে।

কাজ করার সময় অনুরোধ মেসেজ ক্লায়েন্ট সার্ভারের কাছে পাঠানো হয়। সার্ভার কাজটি সম্পন্ন করে এবং উত্তরটি (reply) ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এই মডেলে বহুসংখ্যক ক্লায়েন্ট থাকতে পারে, কিন্তু সার্ভার থাকে কম সংখ্যক। 

এই নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম, যেমন—Linux, Windows NT, Novel Netware ইত্যাদি প্রয়োজন। 

👉 ক্লায়েন্ট/সার্ভার নেটওয়ার্কের সুবিধা (Advantages of Client/Server Network)

  • 1. এই নেটওয়ার্কে কোনো কাজ সার্ভার-এর অনুমতি ব্যতিরেকে করা সম্ভব নয় এবং কাজের জন্য পাশওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়, ফলে মূল্যবান ডাটা ও সফ্টওয়্যার সুরক্ষিত থাকে।
  • 2. এই নেটওয়ার্ক অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, ফলে অনেক ব্যবহারকারী কোনো রকম অসুবিধা ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে।
  • 3. এক্ষেত্রে সার্ভারটি শক্তিশালী কম্পিউটার হয় তাই অন্যগুলি মাঝারিমানের কম্পিউটার হলেও চলে।
  • 4. এই নেটওয়ার্কে ডাটা যাতে নষ্ট না হয় তাই সার্ভার থেকে ডাটা ব্যাকআপ নেওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।
  • 5. সার্ভার কেন্দ্রীয় কম্পিউটার হিসাবে নেটওয়ার্কে সমস্ত ডাটা ও সফ্টওয়্যারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে সার্ভার-এর দ্বারা অনেক ব্যবহারকারীকে নিয়ন্ত্রণের কাজ খুব সহজেই করা যায়।

👉 ক্লায়েন্ট/সার্ভার নেটওয়ার্কের অসুবিধা (Disadvantages of Client/Server Network)

  • 1. এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাটি যথেষ্ট জটিল তাই এটি স্থাপন করা যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য ।
  • 2. যেহেতু নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ সার্ভার-এর ওপর কেন্দ্রীভূত তাই সার্ভার বিকল হলে সমগ্র নেটওয়ার্কে এর প্রভাব পড়ে।
  • 3. এই নেটওয়ার্কে সার্ভারকে নিয়ন্ত্রণ (Control) করার জন্য সর্বদাই একজন দক্ষ System Administrator-এর প্রয়োজন হয়।
  • 4. এই নেটওয়ার্কে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের Operating System – Linux, Novel Netware, Windows NT ইত্যাদি নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয়।

 ✍️ B. পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক (Peer-to-Peer Network)

এইরূপ নেটওয়ার্ক মডেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হ’ল প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশনের সমান দক্ষতা ও দায়িত্ব বর্তমান । এই সংগঠনের অন্তর্গত প্রতিটি ওয়ার্কস্টেশনই তথ্য প্রেরণ এবং গ্রহণ করতে পারে। কোনো ওয়ার্কস্টেশনই সার্ভার হিসাবে অন্য ওয়ার্কস্টেশনকে তথ্য প্রেরণ করার জন্য একান্তভাবে নিয়োজিত (dedicated) নয়। 

Network Configuration
Photo from Modern Computer Application book by Anupam

এইরূপ নেটওয়ার্ক সংগঠন সাধারণত সহজতর এবং তুলনামূলক কম খরচে প্রয়োজনীয় সুবিধা দেয়। তবে গতি এবং লোড নেবার ক্ষমতার কথা বিবেচনা করলে এটি কম দক্ষতাসম্পন্ন।

 👉 পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের বৈশিষ্ট্যবলি 

  • (i) ব্যবহারকারীগণ তাঁদের মেশিনের বিভিন্ন সম্পদ (যেমন—ফাইল, ফোল্ডার, অ্যাপ্লিকেশনসমূহ, প্রিন্টার, সিডি/ডিভিডি রম ড্রাইভ, ফ্লপি ড্রাইভ, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি) নিজেদের মধ্যে বণ্টন বা ভাগাভাগি করতে পারেন।
  • (ii) নেটওয়ার্কে যুক্ত সমস্ত নোডই (ওয়ার্ক স্টেশন) সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট দ্বৈত ভূমিকা পালন করে।
  • (iii) এই ধরনের নেটওয়ার্ক দশজন বা তার কম ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
  • (iv) এই নেটওয়ার্কে বিকেন্দ্রীভূত ফাইল বা যে কোনো সফ্টওয়্যার সম্পদ এক জায়গায় সংরক্ষিত নয়।
  • (v) এখানে প্রত্যেক ব্যবহারকারী নিজ নিজ কম্পিউটার প্রশাসন (administration) নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন; একান্তভাবে নিয়োজিত অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (Dedicated Administrator)-এর প্রয়োজন হয় না।
  • (vi) এটি তৈরি করার জন্য বিশেষ কোনো সফ্টওয়্যার বা নেটওয়ার্ক Operating System-এর প্রয়োজন হয় না, Windows 98, ME কিংবা XP বা VISTA ইনস্টল করা থাকলেই সম্ভব।
  • (vii) নেটওয়ার্কে যুক্ত নোডগুলির মধ্যে দূরত্ব যত বেশি হয়, নেটওয়ার্ক দক্ষতা তত হ্রাস পায়।
  • (viii) এইরূপ নেটওয়ার্ক সাধারণত LAN বা CAN-এ ব্যবহৃত হয়।

পূর্বেই বলা হয়েছে, কম্পিউটারে উইন্ডোজ ইনস্টল থাকলে সহজেই একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়। এজন্য কম্পিউটারকে অন্য কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং এটিকে ওয়ার্কস্টেশন হিসাবে স্থাপন (configure) করতে হবে। তাহলেই এটি অন্য ওয়ার্কস্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।

একই পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণকারী কম্পিউটারগুলিকে নিয়ে গড়ে ওঠে ওয়ার্কগ্রুপ (ম্যাকিন্টশ-এ বলা হয় গ্রুপ), যার মাধ্যমে বোঝানো যেতে পারে কোন্ কম্পিউটার কিংবা কোন্ ডিপার্টমেন্টের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

👉 পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের সুবিধা (Advantages of Peer-to-Peer Net- work)

  • 1. এই নেটওয়ার্ক গঠন/স্থাপন করা তুলনামূলক সহজতর কাজ। কম পরিশ্রমে এই নেটওয়ার্ক গঠন করা যায়।
  • 2. অতিরিক্ত সার্ভার হার্ডওয়্যার কিংবা সফ্টওয়্যার দরকার পড়ে না। সেজন্য খরচ যথেষ্ট কম হয় ।
  • 3. ব্যবহারকারীগণ নিজ নিজ সম্পদ পরিচালনা করতে পারবে। এজন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কিংবা অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হয় না।
  • 4. এক্ষেত্রেও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ব্যবহারের খরচ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।
  • 5. যেকোনো নোড থেকে যেকোনো নোডে ডাটা স্থানান্তরিত হ’তে পারে। অর্থাৎ সমস্ত নোডই সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট উভয় ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই কোটি সার্ভার তা জানার কোনো প্রয়োজন নেই।
  • 6. যেকোনো নোডের সম্পদ (ফাইল, ফোল্ডার, হার্ডডিস্ক, প্রিন্টার ইত্যাদি) যেকোনো নোড থেকে অ্যাকসেস করা যাবে। অর্থাৎ হার্ডওয়্যার যন্ত্রাংশের জন্য খরচ কমিয়ে দেয়।

👉 পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের অসুবিধা (Disadvantages of Peer-to-Peer Network)

  • 1. এই নেটওয়ার্ক খুব বেশি দূরত্বের জন্য আদর্শ নয়।
  • 2. এই নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশের বেশি হয় না ।
  • কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা না থাকায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত নয়।
  • 4. এই নেটওয়ার্কে ডাটা ব্যাকআপ নেওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই।
  • 5. ডাটা অ্যাকসেস করতে সময় বেশি লাগে কারণ ডাটা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করার সুযোগ নেই ।
  • 6. যে সমস্ত কম্পিউটারের সঙ্গে বণ্টনযোগ্য সম্পদ যুক্ত থাকবে, সেগুলির দক্ষতা কমে যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *