নিচে নেটওয়ার্কিং পদ্ধতিতে তথ্য কিভাবে প্রেরণ করা হয় তার নিয়ম, ধরন ও উপায়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
(1) তথ্য প্রেরণের প্রণালী বা নিয়ম (Form / Methods of Data Transmission)
তথ্য প্রেরণের প্রণালী বা নিয়ম (Form / Methods of Data Transmission) কোনো মাধ্যমের মধ্য দিয়ে তথ্য প্রেরণ দুটি পদ্ধতিতে করা যায়, একটি হল অ্যানালগ (Analog) পদ্ধতিতে তথ্য প্রেরণ এবং আর-একটি হল ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য প্রেরণ।
(i) অ্যানালগ পদ্ধতিতে তথ্য প্রেরণ (Analog Data Transmission)
অ্যানালগ সংকেত আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করে থাকি। আমরা যখন ‘কথা’ বলি তখন সেটি অ্যানালগ সংকেত হিসেবেই পরিবাহিত হয়। অ্যানালগ সংকেত সাইন ওয়েভ (Sign Wave) তৈরি করে যাতে থাকে বিস্তার বা অ্যামপ্লিচ্যুড (Amplitude) এবং কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency)। অ্যানালগ ডাটা সংকেত বিরামহীন বা ধারাবাহিক (Continuous) ডাটাকে বোঝায়। যা কোনো ভৌত মানকে (ইলেকট্রিক কারেন্ট) বোঝায়। যেমন—ভোল্টেজ, তাপমাত্রা ইত্যাদি।
উদাহরণ : রেডিয়ো সিগন্যাল, টেলিফোনে কথোপকথন, E.C.G-ডাটা ইত্যাদি।
অ্যামপ্লিচ্যুড (Amplitude) : সাইন ওয়েভের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পয়েন্টের দূরত্বকে বলা হয় বিস্তার বা অ্যামপ্লিচ্যুড (Amplitude)। এই বিস্তার যত বেশি হবে সংকেত তত শক্তিশালী হবে। এই শক্তিকে মাপা হয় অ্যামিপেয়ার (Ampere) এককে।
কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency) : প্রতি সেকেন্ডে কোনো সংকেত যতগুলি ওয়েভ তৈরি করে সেটাই হল কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency)। এই কম্পাঙ্ক মাপা হয় হার্জ (Hertz) এককে।
ওয়েভলেন্থ (Wavelength) : দুটি পরপর ওয়েভের মধ্যে দূরত্বকে ওয়েভলেন্থ বলে। অর্থাৎ একটি ওয়েভলেন্থ যেখানে শেষ হচ্ছে সেটি হল একটি সাইকেল (one cycle)।
👉 অ্যানালগ সংকেতের সুবিধা :
- অডিয়ো ও ভিডিয়ো ডাটা প্রেরণের জন্য এ ধরনের সিগন্যাল বেশি উপযোগী।
- একই তথ্য পরিবহনের জন্য অ্যানালগ সংকেত । ডিজিটাল সংকেতের চেয়ে কম ব্যান্ডউইদ্ (Bandwidth) ব্যবহার করে।
- পৃথিবীর যেকোনো স্থানে অ্যানালগ সিগন্যালিং সিস্টেম পাওয়া যায়।
- অন্যান্য সিগন্যালের শব্দ (noise) অ্যানালগ সংকেতকে কমই প্রভাবিত করতে পারে।
(ii) ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে তথ্য প্রেরণ (Digital Data Transmission) :
কম্পিউটার নিজের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে ডিজিটাল সংকেত। ডিজিটাল সংকেতকে প্রকাশ করা হয় স্কোয়ার ওয়েভ দিয়ে। কম্পিউটারে সকল ডাটা (সংখ্যা, অক্ষর সবকিছু) বাইনারি হিসাবে প্রকাশ করা হয়। বাইনারি পদ্ধতিতে দুটি মাত্র অঙ্ক ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে 1 ও 0 অংক।
ডিজিটাল সংকেতেও তেমনই থাকে অন্ (ON) ও অফ্ (OFF), যে দুটি যথাক্রমে 1 ও 0 বিট (Bit)-কে প্রকাশ করে। কম্পিউটারে ডাটা পরিবহনের মৌলিক মাপ হল এই বিট, অর্থাৎ ডিজিটাল ডাটা সংকেত 1 এবং 0-এর সমন্বিতরূপে প্রকাশিত এবং প্রেরিত হয়। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য প্রেরণ অ্যানালগ পদ্ধতির থেকে অনেক বেশি দ্রুত হয়।
অ্যানালগ সংকেত ও ডিজিটাল সংকেতের মধ্যে পার্থক্য (Differ-ence between Analog Signal and Digital Signal data Transmission)
অ্যানালগ সংকেত | ডিজিটাল সংকেত |
---|---|
অ্যানালগ সংকেত তথ্যের ভৌত মানকেবোঝায়। | ডিজিটাল সংকেত 1(ON) এবং 0(OFF),এই দুই অঙ্কের সমন্বয়ে সৃষ্ট ডাটাকেবোঝায়। |
অডিয়ো (শব্দ) এবং ভিডিয়ো (চিত্র) তথ্যপ্রেরণের জন্য এই সংকেত ব্যবহার করাহয়। | লিখিত (Text) তথ্য প্রেরণে এই সংকেতবেশি উপযোগী। |
অ্যানালগ সংকেত শব্দের দ্বারা খুবই কমপ্রভাবিত হয়। | ডিজিটাল সংকেত শব্দ দ্বারা যথেষ্টপ্রভাবিত হয়। |
অ্যানালগ সিস্টেম বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃতহয়। এটি সহজলভ্য নয় এবং যথেষ্ট দামি। | ডিজিটাল সিস্টেম সহজলভ্য এবং দামওআয়ত্তের মধ্যে। |
অ্যানালগ সংকেত যথেষ্ট পরিষ্কার এবংস্পষ্ট নয় তবে ছবি, শব্দ ইত্যাদি ক্ষেত্রেনিখুঁত। | ডিজিটাল সংকেত অনেক পরিষ্কার, স্পষ্টএবং যথাযথ। |
অ্যানালগ তথ্য সংক্ষিপ্তকরণ (Compression) সহজসাধ্য নয়। | ডিজিটাল ডাটা সহজেই সংক্ষিপ্ত করা(Compress) যায়। |
এক্ষেত্রে তথ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম । | এক্ষেত্রে তথ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টবেশি। |
(2) তথ্য প্রেরণের ধরন (Data Transmission Modes)
নেটওয়ার্ক সিস্টেমে যুক্ত দুটি কম্পিউটার যখন পরস্পরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করে (একটি প্রেরকও অপরটি গ্রাহক হিসাবে) সেই তথ্য আদানপ্রদানের ধরন (Mode) তিন রকমের হয়।
- (i) সিমপ্লেক্স মোড (Simplex Mode)
- (ii) হাফ ডুপ্লেক্স (Half Duplex )
- (iii) ফুল ডুপ্লেক্স (Full Duplex)
(i) সিমপ্লেক্স মোড (Simplex Mode Data Transmission) :-
এই মোডে তথ্যপ্রেরণ কেবলমাত্র একদিকে প্রেরণ করা সম্ভব অর্থাৎ তথ্যপ্রবাহটি একমুখী হয়। A এবং B দুটি বিন্দুর মধ্যে যোগাযোগ এমন থাকে যে শুধুমাত্র A থেকে B-তে সংকেত প্রেরণকরা সম্ভব, কিন্তু বিপরীত পথে B থেকে A-তে সংকেত প্রেরণ কোনোমতেই সম্ভব নয়।
উদাহরণ : Television System-কে Remote Control-এর মাধ্যমে ব্যবহার করা। অথবা, কীবোর্ড ও মনিটারকে আমরা সিমপ্লেক্স মোডের একটি উদাহরণ হিসাবে ধরে বলতে পারি কীবোর্ড সর্বদাই তথ্য প্রেরণ করে এবং মনিটর সেই তথ্য গ্রহণ করে আউটপুট হিসাবে দেখায়।
(ii) হাফ ডুপ্লেক্স (Half Duplex Data Transmission) :-
এই মোডে তথ্য প্রেরণ উভয় দিকে সম্ভব। কিন্তু কখনোই যুগপৎ (একই সঙ্গে) নয় অর্থাৎ A থেকে B-তে তথ্য প্রেরণ সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে তথ্য প্রেরণের জন্য একটিমাত্র লাইনই (দুটি তার) বর্তমান। প্রেরক তথ্য প্রেরণ করলে গ্রাহক তা গ্রহণ করে। আবার গ্রাহক প্রেরণ করলে প্রেরক তা গ্রহণ করে অর্থাৎ প্রেরক গ্রাহকের ভূমিকায় এবং গ্রাহক প্রেরকের ভূমিকায় কাজ করতে পারে।
উদাহরণ : কম্পিউটার এবং ডিস্কের মধ্যে যোগাযোগ, ও Walkie-talkie
(iii) ফুল ডুপ্লেক্স (Full Duplex Data Transmission) :
এই মোড়ে, উভয়দিকে যুগপৎ তথ্য প্রেরণ সম্ভব। এক্ষেত্রেA এবং B দুটি বিন্দুর মধ্যে সংকেত প্রেরণের জন্য দুটি পথ (চারটি তার) বর্তমান। একটিA থেকে B-তে এবং অপরটি B থেকে A-তে। এই প্রকার উভয়মুখী প্রেরণে, A যখন তথ্যসংকেত B-কে প্রেরণ করে, একই সময়ে B ও A-কে তথ্য সংকেত প্রেরণ করতে পারে ( নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে)।
প্রেরক এবং গ্রাহক নিজেদের রূপ পরিবর্তনে সক্ষম (প্রেরক গ্রাহকের ভূমিকায়এবং গ্রাহক প্রেরকের ভূমিকায়)। এখানে তথ্য একদিকে প্রেরিত হলে, একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণসংকেত অন্যদিকে প্রেরিত হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তথ্য প্রেরণের জন্য এই প্রকারমোড ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ :- টেলিফোন লাইন। যেখানে কথা বলা ও শোনা একই সঙ্গেসম্ভব।
👉 নিচে সিমপ্লেক্স মোড, হাফ ডুপ্লেক্স ও ফুল ডুপ্লেক্সের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করা হলো
সিমপ্লেক্স মোড | হাফ ডুপ্লেক্স | ফুল ডুপ্লেক্স |
---|---|---|
তথ্য প্রেরণ সর্বদা একমুখীহয়। | তথ্য প্রেরণ উভয়দিকেই হতে পারে, তবে একই সময়ে নয়। | তথ্য প্রেরণ উভয়দিকেই একই সময়ে হতে পারে। |
তথ্য প্রেরিত হয়েছে কিনাকোনো নিশ্চিত প্রমাণপাওয়া যায় না। | তথ্য প্রেরিত হয়েছে কিনাতার নিশ্চিত প্রমাণ পেতেদেরি হয়। | তথ্য প্রেরিত হয়েছে কিনাখুব তাড়াতাড়ি প্রমাণপাওয়া যায়। |
এখানে প্রয়োজনীয়তারের সংখ্যা দুটি। | হাফ ডুপ্লেক্সেও প্রয়োজনীয় তারের সংখ্যা দুটি। | কিন্তু ফুল ডুপ্লেক্সে প্রয়োজনীয়তারের সংখ্যা চারটি। |
এই মোডে পরিবহন খরচ খুবই কম। | এই মোডে পরিবহন খরচ মাঝারি অর্থাৎ খুব বেশিও নয় আবার খুব কমও নয়। | এই মোডে পরিবহন খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। |
বর্তমানে এর ব্যবহার খুবই কম। | বর্তমানে এই মোড মাঝারি সংখ্যায় ব্যবহার হয়। | এর ব্যবহার সর্বাধিক। |
এক্ষেত্রে একটি ডিভাইসপ্রেরক ও অন্যটি গ্রাহকহিসাবে কাজ করে। | এক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে দুটি ডিভাইসই প্রেরক ও গ্রাহক হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু একই সময়ে নয়। | এই মোডে দুটি ডিভাইসই প্রেরক ও গ্রাহক হিসেবে একই সময়ে কাজ করতে পারে। |
(3) তথ্য পরিবহনের বিভিন্ন উপায় (Ways / Types of DataTransmission)
একমুখী (সিমপ্লেক্স) ও উভয়মুখী (হাফ ডুপ্লেক্স এবং ফুল ডুপ্লেক্স) তথ্য পরিবহন বা ডাটা সংকেতপ্রেরণ মূলত দুটি উপায়ে সংগঠিত হয় সমান্তরাল (Parallel) এবং ধারাবাহিক (Serial)।ধারাবাহিক প্রেরণ আবার দুভাগে বিভক্ত—অসমলয় ( Asynchronous) এবং সমলয়(Synchronous)।
(a) সমান্তরাল পরিবহন (Parallel Transmission) :
ডিজিটাল কম্পিউটার বাইনারি ডিজিট(bit) অর্থাৎ ‘0’ এবং ‘1’ ছাড়া কিছু বুঝতে পারে না। তাই কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ডাটা বিটগুচ্ছ(bit stream) আকারে অর্থাৎ ‘0’-এর ‘1’-এর সমন্বিতরূপে প্রেরিত হয়। এইরূপ ‘n বিটেরডাটার ‘n’-সংখ্যক বিট প্রত্যেকটি একটি একটি করে পর পর (ক্রমান্বয়ে) প্রেরিত না হয়েএকসঙ্গে প্রেরিত হয়, তখন সেই প্রেরণকে সমান্তরাল প্রেরণ বলা হয়।
সমান্তরাল পরিবহনের গঠন খুবই সরল। ‘n’-সংখ্যক বিট যুগপৎ (একসঙ্গে) প্রেরণের জন্য‘n’-সংখ্যক তার প্রয়োজন। প্রতিটি বিটের জন্য তার নির্দিষ্ট, প্রতিটি ক্লক পাসে। প্রেরক থেকে‘n’ বিটের ডাটার সবকটি (n-সংখ্যক) বিটই একযোগে গ্রাহকে প্রেরিত হয়। আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য নিজের ছবি দেখুন।
👉 সমান্তরাল প্রেরণের সুবিধা
(i) গতি (Speed) : একযোগে সমস্ত বিট প্রেরিত হয় বলে প্রেরণ গতি অনেক বেশি (ধারাবাহিকপ্রেরণের কয়েকগুণ)।
(ii) ডাটা ভিড় (Data Congestion) : কম দূরত্বের ক্ষেত্রে এইরূপ প্রেরণ সুবিধাজনক। কারণঅধিক গতিশীলতা ছাড়াও ডাটা ভিড় (Data Congestion)-এর সম্ভাবনা কম।
সমান্তরাল প্রেরণের অসুবিধা (Disadvantages) :
(i) অত্যধিক ব্যয় (High Cost) : এইরূপ প্রেরণে n বিট ডাটা প্রেরণের জন্য n-সংখ্যক তার
প্রয়োজন, যা খরচকে ধারাবাহিক প্রেরণের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি করে।
(ii) দীর্ঘ দূরত্ব (Long Distance) : দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেত্রে সমান্তরাল প্রেরণ খুব বেশি কার্যকরী
নয়।
(b) অনুক্রমিক/ধারাবাহিক/ শ্রেণিবদ্ধ প্রেরণ (Serial Transmission) :
ধারাবাহিক প্রেরণেরক্ষেত্রে, নেটওয়ার্কে অবস্থিত যেকোনো দুটি বিন্দুর (নোড বা যন্ত্রাংশ) মধ্যে তথ্য প্রেরণের জন্যএকটিমাত্র পথ (তার) বর্তমান। n বিটের ডাটা সংকেত প্রেরণের ক্ষেত্রে ওই একটিমাত্র পথের( Channel) মধ্য দিয়ে n সংখ্যক বিট একের পর এক প্রেরিত হয়।
ধারাবাহিক পরিবহনের সুবিধা (Advantages) :
(i) কম খরচ (Low Cost) : এক্ষেত্রে কেবলমাত্র একটি পথ (Channel) অর্থাৎ তার ব্যবহৃতহয় বলে খরচ সমান্তরাল প্রেরণের তুলনায় অনেক কম হয়।
(ii) অধিক দূরত্ব (Long Distance) : অধিক দূরত্বের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রেরণ খুবই কার্যকরী।
ধারাবাহিক পরিবহনের অসুবিধা (Disadvantages) :
(i) কম গতি (Low Speed) : এক্ষেত্রে সমান্তরাল প্রেরণের তুলনায় সময় বেশি লাগে অর্থাৎএক্ষেত্রে সংকেত প্রেরণের গতি কম হয়।
(ii) ডাটাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় (Long waiting time of data) : ডাটা-কিউ(Queue)-এ ডাটাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
(iii) পরিবর্তন ডিভাইসের প্রয়োজন (Need for Converter) : তা ছাড়া যেহেতু ডিভাইসগুলিসমান্তরালভাবে যুক্ত, সেজন্য পরিবর্তক ডিভাইসের (Converter) প্রয়োজন
অনুক্রমিক বা ধারাবাহিক প্রেরণ দুরকমের হতে পারে—অসমলয় বা পৃথক (Asynchronous) এবং সমলয় বা যুগপৎ (Synchronous) |
অসমলয় বা পৃথক পরিবহন (Asynchronous)
অনুক্রমিক প্রেরণ রীতি অনুযায়ী অসমলয় বা পৃথক প্রেরণের ক্ষেত্রেও একের পর এক ক্রমান্বয়ে সংকেতপ্রেরিত হয়। এক্ষেত্রে এক-একটি চরিত্রলিপি (সাধারণত ৪ বিটের) প্রতিবারে প্রেরিত হয়। প্রতিটিচরিত্রলিপির (Character) একটি প্রারম্ভিক বিট (Start bit) দ্বারা সংকেতপ্রাপ্ত অর্থাৎ শুরু হয়, যাবাইনারি ‘O’ দ্বারা নির্দেশিত। এর দ্বারাই গ্রাহক চরিত্রলিপির কোডের শুরু বুঝতে পারে।
প্রারম্ভিক বিটের পর চরিত্রলিপির জন্য নির্ধারিত ৪টি বিট প্রেরিত হয়। যার পরই থাকে একটি প্যারিটিবিট (Parity bit), যার দ্বারা গ্রাহক ত্রুটি নির্ধারণ করতে পারে। চরিত্রলিপির জন্য নির্ধারিত বিটের সমাপ্তি বোঝানোর জন্য প্যারিটি বিটের পর এক বা একাধিক সমাপ্তি বিট (Stop bit) থাকে। যেগুলিবাইনারি ‘1’ দ্বারা সূচিত। এরপর অন্য চরিত্রলিপি প্রারম্ভিক বিট দ্বারা শুরু হয়।
যখন কোনো চরিত্রলিপিপ্রেরিত হয় না, তখন বলা হয় যোগাযোগ পথ আদর্শ অবস্থায় রয়েছে, যা বাইনারি ‘1’ দ্বারা প্রকাশিতহয় (অর্থাৎ লাইনে ঋণাত্মক ভোল্টেজের উপস্থিতি)। অসমলয় প্রেরণের দ্বারা সময়ের (timing)সমস্যা এড়ানো যায়।
সমলয়/যুগপৎ প্রেরণ (Synchronous Transmission) :
সমলয় প্রেরণও একপ্রকার অনুক্রমিক প্রেরণ। এক্ষেত্রে বিটগুলির এক-একটি ব্লক (একাধিক বাইট হতেপারে) দীর্ঘ ফ্রেম আকারে প্রেরিত হয়। অর্থাৎ চরিত্রলিপিগুলির (প্রতিটি এক বাইটের অর্থাৎ ৪ বিটের)একটি বা একাধিক এক-একটি দলে (group) প্রেরিত হয় এবং পর পর দুটি বাইটের মধ্যে কোনোফাঁক থাকে না। এখানে প্রারম্ভিক বিট এবং সমাপ্তি বিট থাকে না।
নিয়ন্ত্রণ বৈশিষ্ট্যগুলি (SYN Character) ডাটা সংকেতের প্রথমে এবং সর্বশেষ বিটের শেষে থাকে। প্রতিটি বিটের প্রেরণও গ্রহণের ব্যবধান অর্থাৎ সময় নির্দেশ যথাযথ হওয়ায় গ্রাহক বিটগুচ্ছ গ্রহণ করে প্রতিটি বাইট(চরিত্রলিপি) চিহ্নিতকরণ তথা পৃথকীকরণ করতে পারে, কারণ চরিত্রলিপিগুলি সমলয়ে প্রেরিত অর্থাৎওইগুলির ব্যবধান একরূপ (uniform)।