যখন একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন হয় তখন দুই বা ততোধিক কম্পিউটারকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এই ব্যবস্থাকে নেটওয়ার্কিং বলা হয়। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার ইনপুট ডিভাইস যেমন- স্ক্যানার, ওয়েব ক্যাম ইত্যাদি এবং আউটপুট ডিভাইস যেমন- প্রিন্টার, স্পিকার ইত্যাদি যুক্ত থাকতে পারে।

নেটওয়ার্কিং-এর গুরুত্ব ও প্রয়োগ (Significance & Application of Networking)
Image by Gerd Altmann from Pixabay

নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় কম্পিউটারগুলি কেবল (Cable) বা তারের সাহায্যে অথবা বেতার ব্যবস্থার মাধ্যমে যুক্ত থেকে তথ্য (Data) আদান-প্রদান করে।

সংক্ষিপ্ত ভাবে (সংজ্ঞা):- দুই বা ততোধিক কম্পিউটার যখন কেবল (Cable) বা বেতার ব্যবস্থার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তথ্য আদান-প্রদান করে তখন কম্পিউটারগুলির সংযুক্তিকরণকে নেটওয়ার্কিং (Networking) বলে।

1) নেটওয়ার্কিং-এর গুরুত্ব (Significance of Networking) :

যে বিষয়গুলিতে নেটওয়ার্কিং সহায়তা করে অর্থাৎ নেটওয়ার্ক স্থাপনের সুবিধাগুলি হল-

(i) সম্পদের মিলিত ব্যবহার (Hardware resource sharing) : একই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকলে যে কোনো ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের ইনপুট, আউটপুট ও স্টোরেজ ডিভাইস যেমন- স্ক্যানার, ক্যামেরা, প্রিন্টার, হার্ড ডিস্ক ইত্যাদি যন্ত্রগুলি শেয়ার (Share) করতে পারে।

শুধুমাত্র কম্পিউটার হার্ডওয়্যারই নয়, নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো একটি কম্পিউটারে কোনো প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার রাখলে প্রয়োজন অনুসারে নেটওয়ার্কের অন্য যে কোনো কম্পিউটারে সেটি ব্যবহার করা যায়।

এছাড়া File, Program বা বিভিন্ন প্রকার তথ্যকেও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বন্টন করা যায়।

(ii) তথ্যের সুরক্ষা (Information Protection) : নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় প্রতিটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে একটি স্বতন্ত্র নাম ও পাসওয়ার্ড (Password) বরাদ্দ করা হয়। ব্যবহারকারী যদি এই নেটওয়ার্কের রিসোর্স বা উৎসগুলি ব্যবহার করতে চায় তা হলে অবশ্যই তাকে এ বরাদ্দকৃত নাম ও পাসওয়ার্ড নির্ভুলভাবে ব্যবহার করতে হবে।

ফলে নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত নয় এমন কেউ ইচ্ছে করলেই সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি পাবে না।

(iii) তথ্য সংরক্ষণ (Information Preservation) : নেটওয়ার্কিং সুবিধা কাজে লাগিয়ে একটি কেন্দ্রীয় স্টোরেজ মিডিয়া বা সার্ভারে নেটওয়ার্ক ক্লায়েন্ট যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে। তথ্য সংরক্ষণের এই প্রক্রিয়াকে ডেটা ব্যাকআপ বলা হয়। কেন্দ্রীয় স্টোরেজ মিডিয়া বা সার্ভারে তথ্য সংরক্ষণের ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের হঠাৎ বিনষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক কম।

(iv) তথ্যের আদান-প্রদান (Data Transmission) : তথ্য আদান-প্রদানের জন্যই মূলত নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার প্রচলন। একদিকে আমরা যেমন কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ই-মেল-এর মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে তথ্য পাঠাতে পারি, তেমনি অন্যদিকে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা আমাদেরকে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণে ডেটা আদান-প্রদান করতে সাহায্য করে।

কোনো প্রান্তে তথ্য (চিঠি) পাঠাতে পারি বা সেখান থেকে তথ্য গ্রহণ করতে পারি অপরদিকে তেমনই একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে বসে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের একাধিক অফিসের সন্জো নেট-মিটিং বা ভিডিও কনফারেন্স করতে পারি । বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা যে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্যকে তৎক্ষণাৎ ব্যবহারকারীর সামনে উপস্থিত করতে পারে।

(v) বার্তা বা মেসেজ আদান-প্রদান (Exchange Message) : একটি অফিসের মধ্যে একস্থান থেকে অন্য স্থানে কাগজে কোনো তথ্য, ডকুমেন্ট বা বার্তা আদান-প্রদান একদিকে যেমন সময় সাপেক্ষ অদ্ভিক ব্যয়বহুলও । নেটওয়ার্কযুক্ত ক্লায়েন্ট একে অপরের সাথে ই-মেল এর সাহায্যে খুব সহজেই ডকুমেন্ট আদান-প্রদান করতে পারে। এরফলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায় এবং ডকুমেন্টের নিরাপত্তাও বজায় থাকে। এই পদ্ধতিকে EDI বা (Electronic Data Interchange) বলে।

2) নেটওয়ার্কের প্রয়োগ (Application of Network) :

নেটওয়ার্কিং সবচেয়ে বেশি যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল—

i) ই-মেইল (E-mail) :- ই-মেলের সাহায্যে চিঠিপত্র আদান-প্রদানের জন্য।

ii) ফাইল পাঠানো (File Sharing) :- একটি কম্পিউটার থেকে অন্য যে কোনো কম্পিউটারে ফাইল, ডকুমেন্ট, ছবি, গান ইত্যাদি পাঠানোর জন্য।

iii) ব্যাংকের ক্ষেত্রে (Core Banking Service) :- বর্তমানে ব্যাংক পরিষেবায় C.B.S (Core Banking Service) চালু হয়েছে। এটি নেটওয়ার্কিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

iv) তথ্য সংগ্রহ (Data Collection) :- নেটওয়ার্কিং-এর আরো একটি সফল প্রয়োগ হল ইন্টারনেট। এর সাহায্যে সারা বিশ্বের যে কোনো তথ্য আমরা সংগ্রহ করতে পারি।

v) ই-কমার্স (E-commerce) :- নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সংস্থা বর্তমানে ওয়েব পেজ ডিজাইন-এর মাধ্যমে সারা বিশ্বে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিজ্ঞাপন করে।

vi) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এর ক্ষেত্রে (Social Networking) :- নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে চ্যাটিং (Chatting), নেটসার্ফিং এবং অতি সম্প্রতি টুইটার (Twitter) লিখন ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়।

vii) অনলাইন ক্রয় (Online Shopping) :- নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ইন্টারনেটে দ্রব্য সামগ্রী কেনাবেচা (Internet shopping), লগ্নি (Investment) করা এবং অন্যান্য ব্যাবসায়িক কাজকর্ম করা হয়।

এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন নতুন নতুন ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং সফলভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *