যখন দুই বা ততোধিক কম্পিউটার সিস্টেম একত্রে বিশেষ কোনো মাধ্যম (যেমন—কেবল তার, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল, বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা, মাইক্রোওয়েভ, উপগ্রহ ইত্যাদি) দ্বারা যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার নেটওয়ার্ক ডিভাইসের সহায়তায় (যথা—মোডেম, রুটার ইত্যাদি) পরস্পরের মধ্যে তথ্য (লিখিত টেক্সট, শব্দ, ছবি ইত্যাদি) আদানপ্রদান করতে পারে, তখন সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং বলে। সাধারণত কম্পিউটারগুলিকে বলা হয় নোড (Node) এবং সংযোজিত মাধ্যমকে বলা হয় কমিউনিকেশন (Communication) চ্যানেল।
👉 নেটওয়ার্কিং-এর সংজ্ঞা (what is networking)
দুই বা ততোধিক কম্পিউটার যখন কেবল (Cable) বা বেতার ব্যবস্থার সাহায্যে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তথ্য আদানপ্রদান করে তখন কম্পিউটারগুলির সংযুক্তিকরণকে নেটওয়ার্কিং বলে।
নেটওয়ার্কের পাঁচটি মূল উপাদান (networking layers) হল—
(i) টারমিনাল (Terminal) : একটি নেটওয়ার্কে তথ্যাদি প্রেরণ বা গ্রহণের জন্য যে ইনপুট বা আউটপুট যন্ত্রাদি ব্যবহার করা হয় তাকে টারমিনাল বলে। যেমন মাইক্রোকম্পিউটার, টেলিফোন, ফ্যাক্স মেশিন ইত্যাদি।
(ii) টেলিকমিউনিকেশন প্রসেসর (Telecommunication Processor) : টারমিনাল ও
কম্পিউটারের মধ্যে তথ্যাদি প্রেরণ বা গ্রহণের জন্য যেসব যন্ত্রাদি ব্যবহার করা হয় সেগুলিকে কমিউনিকেশন প্রসেসর বলেন। যেমন – মডেম, মাল্টিপ্লেক্সার ইত্যাদি।
(iii) টেলিকমিউনিকেশন চ্যানেল ও মাধ্যম (Telecommunication Channel & Media) : যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে তথ্যাদি প্রেরণ করা হয় তাকে বলা হয় টেলিকমিউনিকেশন চ্যানেল। যেমন—কো-অ্যাক্সিয়াল (Co-axial) কেব্ল, ফাইবার অপটিক (Fiber-optic) কেবল, মাইক্রোওয়েভ সিস্টেম ইত্যাদি।
(iv) কম্পিউটার (what is networking in computer) : নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের ও সাইজের কম্পিউটারকে এমনভাবে সংযোগ করা হয় যাতে সেগুলি তথ্য প্রক্রিয়াকরণ (Processing)-এর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে। যেমন— বৃহৎ সংস্থায় একটি নেটওয়ার্কের মেইনফ্রেম (Mainframe) কম্পিউটারকে হোস্ট (Host) কম্পিউটার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
(v) টেলিকমিউনিকেশন সফ্টওয়্যার (Telecommunication Software) : এতে থাকে
কতগুলি প্রোগ্রাম যা কম্পিউটার সিস্টেমের টেলিকমিউনিকেশন সংক্রান্ত ক্রিয়াকলাপ (Activity) নিয়ন্ত্রণ করে এবং নেটওয়ার্কের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে।
👉নেটওয়ার্কিং-এর সুবিধা (Advantages of Networking)
(i) পরিচালনা করার সুবিধা (Easy Maintenance) : সমস্ত নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি একটি এককের (unit) ন্যায় কাজ করে। যার ফলে পরিচালনা করার সুবিধা হয়।
(ii) সম্পদের মিলিত ব্যবহার (Resource Sharing) : একই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকলে যেকোনো ব্যবহারকারী বিভিন্ন ধরনের ইনপুট, আউটপুট ও স্টোরেজ ডিভাইস যেমন – স্ক্যানার, প্রিন্টার, হার্ড ডিস্ক ইত্যাদি যন্ত্রগুলি শেয়ার (Share) করতে পারে। শুধুমাত্র কম্পিউটার হার্ডওয়্যারই নয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত যে কোনো একটি কম্পিউটারে কোনো প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার রাখলে প্রয়োজন অনুসারে নেটওয়ার্কের যেকোনো কম্পিউটার সেটি ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া File, Program বা বিভিন্ন প্রকার তথ্যকেও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে বণ্টন করা যায়।
(iii) সহজ প্রযুক্তি (Simplest Technology) : কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সেট করা খুবই সহজ কাজ।
(iv) বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability) : নেটওয়ার্ক সিস্টেমটি খুবই বিশ্বাসযোগ্যভাবে কাজ করে।
(v) নমনীয়তা (Flexibility) : নেটওয়ার্কিং সিস্টেম-এ কাজের চাপ বৃদ্ধি পেলে বেশি সংখ্যক প্রসেসর ব্যবহার করে কাজের চাপ কমানো যায় ।
(vi) তথ্যের আদানপ্রদান (Exchange of Information) : তথ্য আদানপ্রদানের জন্যই মূলত
নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার প্রচলন। যেমন ই-মেল-এর মাধ্যমে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তথ্য (চিঠি) পাঠানো যেতে পারে। তেমনই একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে বসে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের একাধিক অফিসের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করতে পারি। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্যকে তৎক্ষণাৎ ব্যবহারকারীর সামনে উপস্থিত করতে পারে।
(vii) নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা (Protection & Privacy) : তথ্য আদানপ্রদানের জন্যই নেটওয়ার্কিং সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্যের আদানপ্রদান অধিকতর নিশ্চিত। গৃহীত তথ্য যেমন অধিকতর সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত থাকে, একইভাবে প্রেরিত তথ্য নির্দিষ্ট কম্পিউটারের ঠিকানায় খুবই সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে যায়।
(vii) কম খরচ (Low Cost) : নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে একই উৎস তথা অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি ব্যবহারের সুযোগ থাকায় খরচও কম হয়।
👉 নেটওয়ার্কিং-এর অসুবিধা (Disadvantages of Networking)
(i) অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন (Need for additional Money) : নেটওয়ার্কে যন্ত্রসংস্থাপন (Implementation) এবং পর্যবেক্ষণ (Maintenance) -এর জন্যে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন।
(ii) মেমোরিতে স্পেসের প্রয়োজন (Need for Memory Space) : নেটওয়ার্কিং সফট্ওয়্যার প্রতিটি কম্পিউটারে 20% মেমোরি স্পেস দখল করে। এর ফলে ব্যবহারকারী কম পরিমাণে মেমোরি স্পেস ব্যবহার করতে পারে নিজের প্রোগ্রামের জন্য।
(iii) জটিলতা (Complexity) : নেটওয়ার্কিং কম্পিউটার সিস্টেমের জটিলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যবহারকারীর অনেক সময় নেটওয়ার্কিং সিস্টেম বুঝতে অসুবিধা হয়।
(iv) নিয়ন্ত্রণ হারানো (Loss of Control) : নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে নোডগুলির মধ্যে সংযোগ ব্যাহত হলে নেটওয়ার্ক কাজ করে না।
👉 নেটওয়ার্কের প্রয়োগ (Application of Network)
নেটওয়ার্কিং সবচেয়ে বেশি যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল—
(i) যোগাযোগের ক্ষেত্রে ( Comunication)- ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে । যেমন— ই-মেলের মাধ্যমে খবরাখবর প্রেরণ, চ্যাটিং (Chatting), নেটসার্ফিং এবং টুইটার (Twitter) নিউজ গ্রুপ ভয়েস ও ভিডিয়ো কনফারেন্স।
(ii) তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে (data access) – যেখানে তথ্য অ্যাসেস করার প্রয়োজন হয় সেখানে এর ব্যাপক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। যেমন— আর্থিক ক্ষেত্র যথা—ব্যাংক, অন লাইন শপিং, খবরের কাগজ এবং পত্রপত্রিকা, লাইব্রেরি সিস্টেম,ভৌগোলিক তথ্য, ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহে, বিভিন্ন বিষয়ের সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্র তথ্যাদি।
(iii) সামাজিক ক্ষেত্রে ( Social Issue)– যেমন— প্রশাসন, শিক্ষাদপ্তর, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ইত্যাদি সামাজিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে।
(iv) প্রতিরক্ষা দপ্তর (Defence) এবং সিকিউরিটি ফোর্সসমূহে – যেমন আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগাযোগের ফলে সুরক্ষার কাজ অনেক সহজ হয়েছে।
(v) বিনোদন (Entertainment) ক্ষেত্রে – বাড়িতে বসে নতুন চলচ্চিত্র, তথ্যচিত্র দেখা, গান শোনা, ভিডিয়ো গেমস, তাস, দাবা ইত্যাদি খেলে অবসর সময় কাটানোর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
(vii) খেলাধুলা (Games & Sports ) – বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খেলাধুলা সম্বন্ধে পরিচিত হওয়া, আয়ত্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়া রেলওয়ে, এয়ারলাইনস ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ব্যাংকের লেনদেন ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে নেটওয়ারকিং এর ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।
অর্থাৎ বর্তমান আধুনিককালের ডিজিটাল যুগে নেটওয়ার্কিং এর ব্যবহার প্রায় সর্বত্রই রয়েছে। নেটওয়ার্কিং ছাড়া এই ডিজিটাল যুগ সম্পূর্ণ অচল। তবে এর অসদ ব্যবহার থেকে আমাদেরকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে এবং অপরকেও সচেতন করতে হবে।