নেটওয়ার্ক টোপোলজি সংজ্ঞা (definition of topologies)
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা LAN শ্রেণির অন্তর্গত কম্পিউটারগুলি তারের (Cable) সাহায্যে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ল্যান শ্রেণিভুক্ত কম্পিউটারগুলি যে সুনির্দিষ্ট জ্যামিতিক বিন্যাস অনুসারে কেবল বা তারের সাহায্যে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে তাকে নেটওয়ার্ক টোপোলজি (topology means in network) বলে। নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারগুলিকে নোড বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকারের টোপোলজি সমূহ (Different Types topology in computer network)
নেটওয়ার্ক টোপোলজি অনুসারে নেটওয়ার্কের শ্রেণিবিভাগ (Based on Network Topology)
- (1) বাস টোপোলজি (Bus Topology)
- (2) রিং টোপোলজি ( Ring Topology)
- (3) স্টার টোপোলজি (Star Topology)
- (4) হাইব্রিড টোপোলজি (Hybrid Topology)
👉 (1) বাস টোপোলজি (Bus topology in computer network) :
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের অন্তর্গত সর্বাপেক্ষা সরল ও সাধারণ টোপোলজি হল বাস টোপোলজি। এই টোপোলজিতে একটি লম্বা তারের সঙ্গে কম্পিউটারগুলি যুক্ত থাকে। এই তারকে বলা হয় Backbone Cable বা Trunk ।
এই Trunk বা Backbone Cable এর দ্বারা Electronic সংকেতের মাধ্যমেই একটি কম্পিউটার থেকে আর-একটি কম্পিউটারে তথ্য আদানপ্রদান করা হয়। Backbone Cable বা Trunk-এর দৈর্ঘ্য 180 থেকে 185 মিটার পর্যন্ত হয়।
📖 বাস টোপোলজির সুবিধা (Advantages of Bus Topology)
(i) সরল আর্কিটেকচার ও স্থাপত্য শৈলী (Simple Architecture) :– বাস টোপোলজি ছোটোখাটো নেটওয়ার্ক হওয়ায় এর গঠন নকশা (Architecture) সহজ সরল। এটি সহজ স্থাপনযোগ্য ও পরিচালনযোগ্য এবং সহজবোধ্য।
(ii) ছোটো কেবল দৈর্ঘ্য এবং নেটওয়ার্ক গঠনে খরচ কম (Short Cable Length and Low Cost in Constructing Network) :- এখানে মূল যে কেবলটি প্রয়োজন তা যথেষ্ট কম দৈর্ঘ্যের হয় কারণ এতে যুক্ত মেশিনের সংখ্যা কম এবং প্রতিটি মেশিন মূল কেবলের সঙ্গে সাধারণত নিকটবর্তী দূরত্বে যুক্ত হয়। সেইজন্য এই নেটওয়ার্ক গঠনের খরচ কম।
(iii) ডাটা প্রেরণ নিরাপদ (Safe Transmission of Data) :- এই নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা স্বল্প দূরত্বে সীমাবদ্ধ হওয়ায় প্রেরণের সময় ডাটা নষ্ট হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ডাটা প্রেরণ তুলনামূলক নিরাপদ।
(iv) একটি কম্পিউটার খারাপ হলে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিকল হয় না (Failure of one node does not affect entire network) :- বাস টোপোলজি বা নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত কোনো একটি কম্পিউটার খারাপ হলে সমগ্র নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ে না অর্থাৎ অন্য কম্পিউটারগুলিতে ডাটা পাঠাতে কোনো অসুবিধা হয় না।
(v) বিস্তৃত করার সুবিধা (Easy to extend) :– বাস টোপোলজিতে প্রয়োজন অনুসারে কানেক্টারের সাহায্যে একটি কেবল-এর সঙ্গে অন্য একটি কেবল জুড়ে বড়ো করা যায়। ফলে প্রয়োজনে অধিক সংখ্যক কম্পিউটার এই নেটওয়ার্কে যুক্ত করা যায়।
📖 বাস টোপোলজির অসুবিধা (Disadvantages of Bus Topology)
(i) দোষ নির্ধারণ করা কঠিন (Difficulty in fault diagnosis) :– বাস টোপোলজি সরল হলেও কোনো দোষ দেখা দিলে তা খুঁজে বার করা কঠিন। বেশিরভাগ বাসভিত্তিক ল্যানে নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণ একটি বিশেষ নোডে কেন্দ্রীভূত নয় বলে দোষ নির্ধারণ করতে বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন হয়।
(ii) সমগ্র নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা বিকল হতে পারে (The entire network system may be affected) :- এই টোপোলজির প্রধান অসুবিধা হল কেবল বা ট্রাঙ্কটি খারাপ হলে সমগ্র নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাটি বিকল হয়ে পড়ে।
(iii) তথ্য প্রেরণে সারি গঠন (Queue formation in data transmission) :– বাস টোপোলজিতে সকল কম্পিউটারগুলি একটিমাত্র লম্বা তার দ্বারা যুক্ত থাকায় কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেবলমাত্র একটি মেশিনই তথ্য প্রেরণে সক্ষম। সুতরাং একাধিক মেশিন একসঙ্গে তথ্য প্রেরণ করতে চাইলে প্রেরকদের একটি সারি (queue) গঠিত হয়। সারির পিছনের দিকের মেসেজ প্রেরণে ইচ্ছুক মেশিনকে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয়।
(iv) বুদ্ধিযুক্ত নোডের প্রয়োজন (Requirement of intelligent nodes) :– প্রথমে ব্যবহৃত নোডগুলির (মেশিন) প্রত্যেকের উপর গুরুদায়িত্ব অর্পিত। তাই প্রতিটি নোডকে বিশেষ হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে বেশি বুদ্ধিসম্পন্ন করা হয়। যা খরচ বৃদ্ধি করে।
(v) দোষ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন (Difficulty in fault isolation) :– একটি বাসে যদি কোনো নোড খারাপ হয়, তাহলে যে স্থানে নোডটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত আছে সেই স্থানেই সেটিকে সংশোধিত করে নিতে হয়। দোষটি কোথায় আছে তা একবার নির্ধারিত হলে নোডটি শুধু সরিয়ে নিলেই চলে। দোষ যদি নেটওয়ার্ক মাধ্যমে হয় তাহলে সেই অংশের সম্পূর্ণটাই খুলে বা পালটে ফেলতে হয়।
👉 (2) রিং টোপোলজি (definition of topology in computer network) :
রিং টোপোলজিতে মেশিনগুলি (নোড), বৃহত্তর অর্থে স্টেশনগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এমনভাবে অবস্থান করে যা রিং-এর আকৃতি ধারণ করে। তাই এই নেটওয়ার্ক নকশার এরূপ নামকরণ। এক্ষেত্রে মেশিনগুলির মধ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট যোগাযোগ বর্তমান থাকে। পাশাপাশি দুটি মেশিন কেবল্ দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। প্রথমটি দ্বিতীয়টির সঙ্গে, দ্বিতীয়টি তৃতীয়টির সঙ্গে এবং এইভাবে শেষ মেশিনটি প্রথমটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে রিং গঠন করে।
মনে রাখতে হবে, রিংটি চক্রাকারে অর্থাৎ বৃত্তের মতো হতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। উপবৃত্তাকার, বর্গাকার, আয়তাকার ইত্যাদি নির্দিষ্ট কিছু সামতলিক ক্ষেত্রের মতো হতে পারে। আবার নির্দিষ্ট কোনো আকৃতির না হয়ে যেকোনো বদ্ধ (Closed) ক্ষেত্রের মতোও হতে পারে। অর্থাৎ মেশিনগুলি বদ্ধ লুপে (loop) যুক্ত থাকলেই হবে।
এক্ষেত্রে কেবলের কোনো প্রান্তই উন্মুক্ত থাকে না, তাই টার্মিনেটর ব্যবহারেরও প্রয়োজন হয় না। আবার দুটি বা ততোধিক রিং নেটওয়ার্ক পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যাদের মধ্যে একটি নোড হচ্ছে সাধারণ। অর্থাৎ রিংগুলি পরস্পরকে নোডে ছেদ করে।
এই নেটওয়ার্কে মেশিনগুলি যত দূরেই অবস্থান করুক এবং যুক্ত হয়ে রিং গঠন করুক না কেন, তথ্য প্রেরণ কৌশল ব্রডকাস্টিং ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করে, কারণ এক্ষেত্রে কোনো কেন্দ্ৰীয় মেশিন থাকে না, যা সার্ভার-এর কাজ করে। এখানেও ডাটা প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মেশিন সমান অধিকার পায়, অর্থাৎ প্রত্যেকেই সার্ভার-এর ভূমিকা পালন করে।
রিং টোপোলজিতে নোডগুলির মধ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট সংযোগ থাকলেও এখানে তথ্য প্রেরণ কৌশল ব্রডকাস্ট ব্যবস্থাকেই সমর্থন করে। অর্থাৎ কোনো কম্পিউটার মেশিন অন্য কোনো মেশিনে মেসেজ পাঠাতে চাইলে প্রথমে তা পার্শ্ববর্তী নিকটস্থ মেশিনের কাছে যাবে। সেই মেশিনটি দেখবে মেসেজটি তার জন্য কিনা। যদি তার জন্য না হয়, তাহলে মেসেজটিকে বর্ধিত বা পুনঃউৎপাদিত করে পরবর্তী মেশিনে (নোডে) পাঠাবে।
সেই মেশিনটি একইভাবে পরখ করে দেখবে এবং মেসেজটি তার জন্য না হলে একইভাবে পরবর্তী মেশিনে পাঠাবে। এইভাবে মেসেজটি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে। এখানে মধ্যবর্তী মেশিনগুলি (যেগুলি মেসেজকে পুনঃপ্রেরণ করে) ভায়া হিসাবে কাজ করে (যা পুনরাবৃত্তিকারকের কাজ)।
📖 রিং টোপোলজিতে তথ্য প্রেরণ :
রিং টোপোলজিতে ডাটা প্যাকেট (মেসেজ) প্রেরণ একমুখী এবং উভমুখী উভয় প্রকারের হতে পারে। একমুখী প্রেরণের ক্ষেত্রে, ডাটা প্যাকেট সাধারণত ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণন অভিমুখে প্রেরিত হয়। এক্ষেত্রে কোনো মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে বিশেষ সফ্টওয়্যারের প্রয়োজন হয়।
উভমুখী প্রেরণের ক্ষেত্রে, ডাটা প্যাকেট উভয় দিকেই প্রবাহিত হতে পারে, কিন্তু একই সময়ে অর্থাৎ একসঙ্গে নয়। এক্ষেত্রে একটি অন্যতম সুবিধা হল—কোনো মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে অন্য পথে মেসেজ প্রেরিত হতে পারে।
📖 রিং টোপোলজির সুবিধা (Advantages of Ring topology in computer network)
i) বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliable) :– রিং টোপোলজিতে কেবল-এর দৈর্ঘ্য বাস টোপোলজির তুলনায় কম হয়, ফলে অনেক কম সংযোগ-এর প্রয়োজন। তাই এই টোপোলজির বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি।
ii ) দ্রুত তথ্য প্রেরণ (Fast Transmission of Data) :– এই টোপোলজিতে পরিবহনের মাধ্যম হিসাবে ফাইবার অপটিক কেবল ব্যবহৃত হয়, ফলে বাস টোপোলজির তুলনায় তথ্য অনেক দ্রুতগতিতে প্রেরণ করা যায়।
iii) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা (Proper Control) :– রিং টোপোলজিতে কেবল-এর মাধ্যমে যে সংকেত পাঠানো হয় তা প্রতিটি কম্পিউটারের মধ্যে দিয়ে যায়, ফলে সংকেতগুলির ওপর প্রতিটি কম্পিউটারেরই নিয়ন্ত্রণ থাকে।
iv) ক্ষীণ সংকেতকে জোরালো করা (Converting Low Signal into High Signal) :– এই সংকেত প্রতিটি কম্পিউটারের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে কোনো সংকেত ক্ষীণ হয়ে গেলেও কম্পিউটার সংকেতকে জোরালো করে পরের কম্পিউটারে পাঠায় অর্থাৎ প্রতিটি কম্পিউটার এক অর্থে রিপিটারেরও কাজ করে।
v) সহজেই ত্রুটি নির্ধারণ করা যায় (Easy detection of Fault) : এই টোপোলজির গঠন অপেক্ষাকৃত সোজা। তাই কম্পিউটারের ত্রুটি নির্ধারণ অতি সহজেই করা যায়।
📖 রিং টোপোলজির অসুবিধা (Disadvantages of Ring Topology)
i) ডাটা প্রেরণ হার কমে যাওয়া (Decrease in Data Transmission Speed) : পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ব্যবস্থায় সংযুক্ত নেটওয়ার্ক রিং-এর মেশিনগুলিতে কোনো সাধারণ বাস ব্যবহৃত না হওয়ায় কোনো মেশিন কর্তৃক প্রেরিত মেসেজ গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে একাধিক মেশিনের (স্টেশন) মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয়। এর ফলে ডাটা প্রেরণ হার যেমন কমে যায়, তেমনই ভায়া হিসাবে ব্যবহৃত মেশিনগুলিকে সাময়িকভাবে নিজ কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়।
ii) পুরো নেটওয়ার্ক সিস্টেম অকেজো হয়ে যাওয়া (Failure of entire Network) :– নেটওয়ার্ক রিং-এ কোনো নোড ডাটা গ্রহণ তথ্য প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়লে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক সিস্টেমটিই অকেজো হয়ে পড়ে। কোনো ডাটা প্রেরণ করা সম্ভব হয় না যতক্ষণ না উক্ত সমস্যার সমাধান করা যায় (হয় নোডটিকে রিং থেকে বাতিল করে কিংবা ত্রুটিমুক্ত করে)।
উপরিউক্ত অসুবিধাটি একমুখী রিং-এর ক্ষেত্রে। উভমুখী রিং-এর ক্ষেত্রে এরূপ সমস্যা উদ্ভূত হলে অবশ্য বিপরীত (বিকল্প) দিকে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণন অভিমুখের বিপরীত দিকে মেসেজ প্রেরণ সম্ভব ।
iii) বিশেষ সফ্টওয়্যার-এর প্রয়োজনীয়তা (Need for Special Software) :– একটি নোডের ত্রুটিজনিত সমস্যা বা ব্যর্থতা অন্যান্য নোডগুলিতেও প্রতিক্রিয়া করে। যে কারণে ত্রুটি নির্ধারণই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, সংশোধন তো পরবর্তী ধাপ। সংশোধনের জন্য বিশেষ সফ্টওয়্যার প্রয়োজন।
iv) নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন (Reconfiguration of Network) : নেটওয়ার্ক রিং থেকে কোনো নোড সরিয়ে নিলে কিংবা এতে কোনো নোড যোগ করলে নেটওয়ার্কের কাজ বিঘ্নিত হয়। নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করাও কঠিন কাজ।
v) মাধ্যমটির ব্যবহারযোগ্যতা (Availability of the Medium) :– রিং টোপোলজিতে প্রতিটি নোডের দায়িত্ব হল তথ্যকে পাওয়ার পর সেটিকে সঠিকভাবে পরবর্তী নোডে প্রেরণ করা। কিন্তু প্রেরণ করার আগে নেডাটিকে যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে তথ্যকে প্রেরণ করতে হয়, সেটি ব্যবহার করা যাবে কিনা আগে থেকে যাচাই করে দেখতে হয়।
vi) অন্যান্য নোডের উপর নির্ভরশীলতা (Dependent on other Nodes) :– রিং নেটওয়ার্কে সাধারণ ইনপুট-আউটপুট মাধ্যম (যেমন—প্রিন্টার) ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অন্যান্য নোডের উপর নির্ভর করতে হয়। এবং এজন্য নোডের কাজেও বিঘ্ন ঘটে।
👉 3. স্টার টোপোলজি (Star topology in computer network) :
স্টার টোপোলজিতে একটি কেন্দ্রীয় মেশিন থাকে যেখানে নেটওয়ার্কের সমস্ত নোড স্বতন্ত্রভাবে যুক্ত থাকে। উক্ত কেন্দ্রীয় মেশিনটিকে কনসেনট্রেটর (Concentrator) বা নেটওয়ার্কের ভাষায় হাব (Hub) বলা হয়। এরূপ সংযোগের কারণে এই টোপোলজিকে কেন্দ্ৰীভূত টোপোলজি (Concentrated Topology) বলা হয়।
এই নেটওয়ার্কে যুক্ত যাবতীয় মেশিনগুলি এমনভাবে অবস্থান করে যা চাকার স্পোক বা তারার মতো দেখতে হয় বলে টোপোলজির “স্টার” (Star) নামকরণ হয়েছে।
স্টার টোপোলজি LAN-এ প্রযোজ্য একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক বিন্যাস। নেটওয়ার্কের সমস্ত নোড অর্থাৎ মেশিনগুলি (যেগুলি সাধারণত মাইক্রোকম্পিউটার PC) কেন্দ্রীয় হাবের (যেটি সাধারণত বৃহদাকার কম্পিউটার সিস্টেম) সঙ্গে পৃথক পৃথক কেবলের সাহায্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট কৌশলে যুক্ত থাকে।
ডাটা প্রেরণ, অ্যাকসেস এবং সর্বক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব বর্তায় হাবের উপর। স্টার টোপোলজির ক্ষেত্রেও তথ্য প্রেরণ কৌশল ব্রডকাস্টভিত্তিক এবং পয়েন্ট-টু-পয়েন্টভিত্তিক হতে পারে। কোনো নোড (স্টার টোপোলজিতে যাকে টার্মিনালও বলা যায়) অন্য কোনো নোডে মেসেজ পাঠাতে চাইলে প্রথমে তা হাবের কাছে সংকেত আকারে যাবে।
ব্রডকাস্টভিত্তিক স্টার নেটওয়ার্কে হাব উক্ত মেসেজ সমস্ত নোডে পাঠাবে। যার জন্য মেসেজ প্রেরিত সেটি ছাড়া অন্য নোডগুলি মেসেজ না নিয়ে বাতিল করবে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট কৌশল যে স্টার টোপোলজিতে ব্যবহৃত অর্থাৎ সুইচড্ স্টার নেটওয়ার্কে যার জন্য মেসেজ হাব শুধুমাত্র সেই নির্দিষ্ট নোডটিতেই মেসেজ সুইচ করে পাঠাবে।
এই নেটওয়ার্কে হাব কেন্দ্রীয় প্রসেসর-এর ভূমিকা পালন করে। LAN-এ এই টোপোলজি ব্যবহারে বিবিধ মাইক্রোকম্পিউটার মেনফ্রেমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যেখানে মেনফ্রেম কম্পিউটারে সজ্জিত কোনো সংস্থার যাবতীয় ডাটাবেস মাইক্রো-কম্পিউটারগুলি অ্যাকসেস করতে পারে।
অনেক সংস্থা এই টোপোলজি সময়-বণ্টন (time sharing) ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবহার করে, যাতে করে কেন্দ্রীয় প্রসেসর বিবিধ ব্যবহারকারীর মধ্যে বণ্টিত হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতিটি টার্মিনালের (নোড) জন্য কেন্দ্রীয় প্রসেসর (CPU) নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় স্থির করে দেয়।
মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় প্রসেসরের গতি নোডগুলির তুলনায় অনেক বেশি। তাই বোঝা সম্ভব নয়, কেন্দ্রীয় CPU নোডগুলি থেকে কত দূরে অবস্থান করছে। কোনো ছোটো সংস্থা নিজস্ব বৃহদাকার কম্পিউটার না রেখে সময়-বণ্টন ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে অর্থের বিনিময়ে অন্য কোনো নেটওয়ার্ক থেকে সুবিধা নিতে পারে।
📖 স্টার টোপোলজির সুবিধা (Advantages of Star topology in computer network)
(i) নেটওয়ার্কের পুনর্বিন্যাস ( Reconfiguration of Network) :– স্টার টোপোলজিতে অনেকগুলি ঘনীভূত বা কনসেনট্রেশন পয়েন্ট থাকে, যার ফলে এই নেটওয়ার্ক বা টোপোলজির পুনর্বিন্যাস-এর কাজ খুবই সহজ।
(ii) খারাপ কম্পিউটারকে সহজেই বিচ্ছিন্ন করা যায় (Easy elimination of Faulty Computer) :– স্টার টোপোলজিতে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কোনো কম্পিউটার খারাপ হয়ে গেলে সেটিকে সহজেই নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
(iii) অধিক সংখ্যক কম্পিউটার সহজেই যোগ করা যায় (Easy addition of Large number of Computers) : এই নেটওয়ার্কে অধিক সংখ্যক কম্পিউটার সহজেই যোগ করা যেতে পারে। সর্বাধিক কতগুলি কম্পিউটার এই টোপোলজিতে সংযুক্ত করা যেতে পারে, তা নির্ভর করে কয়টি পোর্ট (Port) আছে তার উপর। আবার হাবের (Hub) সব কটি পোর্ট ব্যবহৃত হলে অতিরিক্ত হাব যুক্ত করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
(iv) কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ (Control of Central Computer) :– স্টার টোপোলজিতে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কম্পিউটারের তথ্য আদানপ্রদান একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মাধ্যমে হওয়ায় সমস্ত কম্পিউটারগুলির তথ্যের ওপর কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ থাকে।
(v) ত্রুটি নির্ধারণ করা সহজ (Easy Identification of Fault) :-এই নেটওয়ার্কে কোনো সমস্যা দেখা দিলে সহজেই কেন্দ্রীয় অবস্থান অর্থাৎ হাব থেকে সমস্যা অনুসন্ধান শুরু করা যায়। অর্থাৎ ত্রুটি নির্ধারণ করা সহজতর। বুদ্ধিমান হাব (Intelligent Hub) ব্যবহার করলে তা নেটওয়ার্ক মনিটরিং-এর কাজও করতে পারে।
(vi) সহজ অ্যাকসেস প্রোটোকল (Easy Access Protocol) :– এই টোপোলজিতে হাব এবং নোডগুলির প্রত্যেকটির মধ্যে পৃথকভাবে সংযোগ থাকে বলে প্রেরক নিয়ন্ত্রক উপাদানসমূহ সহজে জানা যায় অর্থাৎ অ্যাকসেস প্রোটোকলসমূহ খুবই সহজ।
(vii) কেবল বা তার সহজে পরিবর্তন করা যায় (Easy replacement of Cable) :– স্টার টোপোলজিতে নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কোনো কেবল নষ্ট হয়ে গেলে সেটিকে সহজেই পরিবর্তন করা যায়।
📖 স্টার টোপোলজির অসুবিধা (Disadvantages of Star Topology)
(i) কেন্দ্রীয় মেশিন (হাব) নির্ভরশীলতা (Central Machine or Hub dependent) :- স্টার টোপোলজির প্রধান অসুবিধা হল এটি সম্পূর্ণরূপে কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা হাব (Hub)- এর উপর নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা হাবটি (Hub) খারাপ হয়ে গেলে সমগ্র নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাই বিকল হয়ে পড়ে।
(ii) নেটওয়ার্কের খরচ বেশি (Increased cost of network) :– স্টার টোপোলজির অন্যতম অসুবিধা হল দূরত্ব। নোডগুলি হাব থেকে যত বেশি দূরে অবস্থান করবে নেটওয়ার্কের খরচ তত বাড়বে। কারণ দীর্ঘ কেবল প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া নেটওয়ার্ক দক্ষতাও হ্রাস পাবে।
(iii) তথ্য আদানপ্রদান ক্ষমতা হ্রাস (Reduction in data transmission capacity) :– এই প্রকার টোপোলজিতে নেটওয়ার্কের সঙ্গে অধিক কম্পিউটার যুক্ত করলে আদানপ্রদানের ক্ষমতা হ্রাস পায়।
👉 4. হাইব্রিড টোপোলজি (Hybrid Topology) :
যখন কোনো টোপোলজি বাস, স্টার, রিং এবং ট্রি টোপোলজির সমন্বয়ে গঠিত হয় তখন তাকে হাইব্রিড টোপোলজি বলে। এতে কোনো অংশে স্টার, কোনো অংশে বাস কিংবা রিং টোপোলজি ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের নেটওয়ার্ক স্থাপন খুবই জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ।