📝 লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (Local Area Network)

ল্যান (LAN) একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অথবা ভৌগোলিকভাবে কম দূরত্বে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক কম্পিউটার সিস্টেমকে (কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি, যথা— প্রিন্টার, মোডেম ইত্যাদি) তারের মাধ্যমে (কেবল) পরস্পরকে যুক্ত করে তথ্য আদানপ্রদান করে।

Local Area Network

LAN-এ যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারই নোড (Node) নামে পরিচিত। নোডগুলি দক্ষতার সঙ্গে ডাটা এবং নেটওয়ার্কে যুক্ত যাবতীয় আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদিকে ভাগাভাগি করে তথ্য আদানপ্রদান করে যা সময়, শ্রম এবং অর্থ বাঁচায়। 

ল্যান একটি ঘরের মধ্যে, একটি অফিস-এর অনেকগুলি ঘরের মধ্যে, একটি বহুতল বাড়ির বিভিন্ন তলের মধ্যে, দুটি বহুতল বাড়ির মধ্যে বা একটি অঞ্চলের মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা ল্যান নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারে প্রিন্টার, স্ক্যানার, হার্ডডিস্ক, মোডেম ইত্যাদি হার্ডওয়্যার এবং এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো কম্পিউটারে অবস্থিত সফ্টওয়্যারকে অন্য কম্পিউটারগুলি (Share) শেয়ার করতে পারে।

👉 ল্যান-এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of LAN)

  • (1) ল্যান (LAN) নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি খুবই ছোটো। এই নেটওয়ার্ক একটি ঘর, বিল্ডিং এবং বড়োজোর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
  • (2) LAN সাধারণত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি বা সংস্থা (সরকারি/বেসরকারি) নিজস্ব কম্পিউটারগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে LAN গঠন করতে পারে।
  • (3) LAN-এ দুই বা ততোধিক কম্পিউটার তথা আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি সরাসরি যুক্ত থাকতে পারে। কম্পিউটারগুলি শুধুমাত্র মাইক্রোকম্পিউটার (PC এবং ওয়ার্কস্টেশন) অথবা বৃহৎ সিস্টেমও হতে পারে, যেগুলিকে নোড বলা হয়।
  • (4) LAN-এ সমস্ত ব্যবহারকারী একই ডাটা (টেক্সট ও গ্রাফিক্যাল তথ্য), ফাইল, অ্যাপ্লিকেশন, প্রোগ্রাম সমস্ত কিছুই বণ্টিত (Shared) উপায়ে ব্যবহার করার সুযোগ পায়।
  • (5) LAN-এ যুক্ত কম্পিউটারের সংখ্যা সবক্ষেত্রে এক নয়। ক্ষুদ্রাকার LAN-এ 2-30 টি কিংবা 50টি কম্পিউটার যুক্ত হতে পারে, যেখানে বৃহদাকার ক্যাম্পাস আকৃতির ল্যান-এ (Campus Area Network or CAN) 10,000 বা তার বেশি কম্পিউটার যুক্ত হতে পারে।
  • (6) LAN-এ তথ্য আদানপ্রদানের মূল মাধ্যম হল কেবল (Cable) বা তার। এই নেটওয়ার্কের কেবল (Cable) এর দৈর্ঘ্যও সবক্ষেত্রে সমান হয় না। বেশিরভাগ LAN-এ 300-350 মিটারের কেবল ব্যবহার করা যায়।
  • (7) LAN নেটওয়ার্কে কম্পিউটারগুলি একটি নির্দিষ্ট জ্যামিতিক বিন্যাসে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যাকে বলা হয় টোপোলজি (Topology)।
  • (৪) LAN নেটওয়ার্কে তথ্য প্রেরণে ত্রুটির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হয়। তাই তথ্য প্রেরণ অনেক বেশি নিরাপদ।
  • (9) LAN নেটওয়ার্কে তথ্য প্রেরণ তুলনামূলকভাবে অন্য সমস্ত নেটওয়ার্কের তুলনায় কম খরচ সাপেক্ষ।
  • (10) LAN-এ ব্যবহারকারী সমস্ত কম্পিউটার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রাদি (যথা—প্রিন্টার, হার্ড ডিস্ক, মোডেম ইত্যাদি) ব্যবহারকারীরা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারেন। আবার নিজস্ব অর্থাৎ স্বাধীন যন্ত্রাংশও (যথা- লোকাল প্রিন্টার) ব্যবহার করা যায়।

👉 ল্যান নেটওয়ার্কের গুরুত্ব (Importance of LAN Network)

বিভিন্ন তথ্যাদি প্রেরণ থেকে ফাইল ট্রান্সফার, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার-এর যৌথ ব্যবহার ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে LAN নেটওয়ার্কের ব্যবহার হয়। 

(1) শেয়ার বা বণ্টন ব্যবস্থা (Sharing) : LAN নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কম্পিউটার বা সার্ভার-এ সঞ্চিত যেকোনো ফাইল নেটওয়ার্কে যুক্ত যেকোনো কম্পিউটারে (নোড) ব্যবহৃত হতে পারে। এ ছাড়া LAN নেটওয়ার্কে যুক্ত যেকোনো ব্যবহারকারী ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার (যেমন – MS-Word, MS-Excel), প্রোগ্রাম এবং হার্ডওয়্যার (যেমন—স্ক্যানার, প্রিন্টার, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি) শেয়ার করতে পারে।

(2) ফাইল ট্রান্সফার (File Transfer) : LAN-এ একটি কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ফাইল স্থানান্তর (প্রকৃত অর্থে কপি করা) খুব দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। এই ফাইল ট্রান্সফার তিনটি উপায়ে করা যেতে পারে।

  • (a) সহজ পদ্ধতি হল ফাইলটি একটি কম্পিউটার থেকে দ্বিতীয় কম্পিউটারে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া।
  • (b) দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল ব্যবহারকারীর ফাইলটি মধ্যবর্তী কোনো স্থানে সঞ্চয় করে রাখা যেখান থেকে অন্য কোনো ব্যবহারকারী পরবর্তীকালে সেটি তুলে নিতে পারে। 
  • (c) তৃতীয় পদ্ধতিটি হল ফাইলটি ওই মধ্যবর্তী স্থানে চিরকালের জন্য সঞ্চিত রাখা যেখান থেকে দু’জন ব্যবহারকারীই যখন তাদের ইচ্ছা হবে তখনই ফাইলটি পেতে পারে। এক্ষেত্রে ফাইল এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে কপি করতে ফ্লপি, সিডি ইত্যাদি যন্ত্রাংশগুলির প্রয়োজন হয় না।
  • (3) যুগপৎ ব্যবহার (Simultaneous Application) : ল্যান নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন (যেমন—চিঠি বা যেকোনো ডকুমেন্ট, লেজার, পে-রোল ইত্যাদি) একই সঙ্গে দুই বা তার অধিক ব্যবহারকারী তার কম্পিউটারে দেখতে পারে বা ব্যবহার করতে পারে।
  • (4) বার্তা প্রেরণ (Message Sending) : ল্যান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহারকারী একই বিল্ডিং-এ অবস্থিত অন্য অফিস বা সংস্থায় চিঠি, মেমো, রিপোর্ট ইত্যাদি পাঠাতে পারে এবং প্রয়োজনমতো প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট-আউটও (হার্ড কপি) পেতে পারে।
  • (5) সম্পদের সঞ্চয় ও তার প্রয়োজনানুসারে ব্যবহার : ল্যান নেটওয়ার্কে কোনো অধিক শক্তিশালী কম্পিউটারে (যেমন—সার্ভার) আমরা সমস্ত তথ্যকে সঞ্চয় করে রাখতে পারি এবং চাহিদামতো ওই কম্পিউটার থেকে তথ্যকে নিয়ে আমরা নির্দিষ্ট যেকোনো কম্পিউটারে তৎক্ষণাৎ ব্যবহার করতে পারি।
  • (6) তথ্যের নিরাপত্তা (Security) : ল্যান নেটওয়ার্কে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্যের নিরাপত্তা অনেক বেশি। এই নেটওয়ার্কে সাধারণত সমস্ত তথ্য ও সফ্টওয়্যার নিয়ন্ত্রণ একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার দ্বারা হয়, ফলে ল্যান নেটওয়ার্কে যুক্ত কোনো কম্পিউটার একে বদলে বা নষ্ট করে দিতে পারে না। প্রতিটি তথ্য ওই কম্পিউটারে মজুত রাখা থাকে, যাকে ব্যাক-আপ বলে। তাই কোনো কম্পিউটারে হার্ড ডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলেও ব্যাক-আপ থেকে আমরা সেটিকে ফিরে পেতে পারি।

👉 ল্যান হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার (LAN Hardware and Software)

ল্যান নেটওয়ার্কে তথ্য আদানপ্রদান করার জন্য যে যে উপাদানগুলির প্রয়োজন হয় তাকে মূলত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। A. ল্যান হার্ডওয়্যার  B. ল্যান সফ্টওয়্যার।

📖 A. ল্যান হার্ডওয়্যার (LAN Hardware) :

ল্যান নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য যে হার্ডওয়্যার উপাদানগুলির প্রয়োজন হয় সেগুলিকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—

(1) কমিউনিকেশন চ্যানেল (Communication Channel) : ল্যান নেটওয়ার্কে একটি কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য যে কেবল বা তার থাকে তাকে কমিউনিকেশন চ্যানেল বলে। এই চ্যানেলের মাধ্যমেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদানপ্রদান করা যায়।

যেসব কেবল-এর মাধ্যমে ল্যান-এ তথ্য আদানপ্রদান করা হয় সেগুলি হল ফাইবার অপটিক কেবল (Fibre Optic Cable), টুইস্টেড পেয়ার কেবল (Twisted Pair Cable) এবং কো-অ্যাক্সিয়াল কেবল (Co-axial Cable)।

(2) সার্ভার (Server) : ল্যান নেটওয়ার্কে যে কম্পিউটার ফাইল, ডাটা, প্রোগ্রাম, সফ্টওয়্যার, প্রিন্টার, স্ক্যানার ইত্যাদি হার্ডওয়্যার নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত অন্য কম্পিউটার বা নোডগুলিকে সরবরাহ করে তাকে সার্ভার (Server) বলে।

তবে ল্যান নেটওয়ার্কের প্রতিটি সার্ভারের এক-একটি আলাদা নাম থাকে। ব্যবহারকারী সেই নামেই সর্ভারটিকে চিহ্নিত করতে পারে। ল্যান নেটওয়ার্কে দুই ধরনের সার্ভার ব্যবহৃত হয়। যথা— ডেডিকেটেড সার্ভার ও নন-ডেডিকেটেড সার্ভার।

  • (i) ডেডিকেটেড সার্ভার (Dedicated Server) : এই ধরনের সার্ভার তথ্য সঞ্চয় ও সেই সঞ্চিত তথ্যের বণ্টন করার কাজে নিয়োজিত থাকে। সাধারণ কম্পিউটারকেও এই ধরনের সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেলে মেনফ্রেম এই ধরনের সার্ভারের কাজ করে।
  • (ii) নন-ডেডিকেটেড সার্ভার (Non-Dedicated Server) : ল্যান নেটওয়ার্কে এই ধরনের সার্ভার যেমন একাধারে ওয়ার্কস্টেশন হিসেবে কাজ করে, অপরদিকে ওই কম্পিউটারের এক-এক অংশ সার্ভার হিসেবে কাজ করে। যেহেতু কম্পিউটারটি সম্পূর্ণভাবে সার্ভার হিসেবে কাজ করার জন্য নিয়োজিত নয় তাই এই ধরনের সার্ভারকে নন-ডেডিকেটেড সার্ভার বলে। এ ছাড়া ল্যান নেটওয়ার্কে কতকগুলি নির্দিষ্ট কাজের জন্য বিশেষ প্রকারের সার্ভার ব্যবহৃত হয়, সেগুলি হল—

(a) ফাইল সার্ভার (File Server) : এই ধরনের সার্ভার ফাইল সঞ্চয় ও প্রয়োজন অনুসারে ফাইল সরবরাহ করার জন্য নিয়োজিত থাকে।

(b) প্রিন্টার সার্ভার (Printer Server) : ল্যানে যুক্ত কম্পিউটারগুলি যেহেতু এক-একটি ওয়ার্কস্টেশন হিসেবে কাজ করে, প্রিন্টার সার্ভার এই ওয়ার্কস্টেশনগুলির প্রয়োজন অনুসারে প্রিন্টিং বা হার্ড কপির জোগান দেয়।

(c) কমিউনিকেশন সার্ভার (Communication Server) : এই ধরনের সার্ভার ল্যান নেটওয়ার্কের ওয়ার্কস্টেশনগুলির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে।

(d) অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার (Application Server) : এম-এস অফিস, ফক্সপ্রো, Tally, Visual Basic ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে সঞ্চয় করে রাখে এবং প্রয়োজন অনুসারে ওইগুলিকে ওয়ার্কস্টেশনগুলিতে সরবরাহ করে।

(e) মোডেম সার্ভার (Modem Server) : এই সার্ভারটি নেটওয়ার্কের দূরবর্তী স্থানে বার্তা প্রেরণ, টেলিফোন-এ অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়।

(f) ডাটাবেস সার্ভার (Database Server) : এই ধরনের সার্ভার সাধারণত ডাটাবেস তথা ইনফরমেশন প্রসেসিং-এর জন্য নিয়োজিত থাকে।

(3) ওয়ার্কস্টেশন (Workstation) : ল্যান নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীরা যে সকল কম্পিউটার ব্যবহার করে তথ্য আদানপ্রদান করা হয় তাদের প্রত্যেকটি কম্পিউটারকে এক-একটি ওয়ার্কস্টেশন বলা হয়। এই ওয়ার্কস্টেশনগুলি প্রয়োজন অনুসারে নিজেদের মধ্যে অথবা মেন সার্ভার থেকে তথ্য আদানপ্রদান করে।

(4) নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস ইউনিট বা নিউ (Network Interface Unit or NIU) : এটি একটি যন্ত্র যা সার্ভার এবং ওয়ার্কস্টেশনগুলিকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত করতে সাহায্যে করে। এটি শুধুমাত্র সার্ভার এবং ওয়ার্কস্টেশনের মধ্যে যুক্ত করার কাজই করে না, এটি যে কোনো ডিভাইসের সঙ্গে বণ্টিত ব্যবস্থার সংযোগ রক্ষাকারী ডিভাইস হিসাবে কাজ করে, যেখানে LAN অ্যাকসেস করার যাবতীয় সূত্র, যুক্তি থাকে। এর কাজ বিভিন্ন LAN টপোলজির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ৷

📖 B. ল্যান সফ্টওয়্যার (LAN Software ) :

ল্যান হার্ডওয়্যার যেমন নেটওয়ার্ককে সঠিকভাবে সংযুক্ত রাখে, একইভাবে ল্যান নেটওয়ার্ককে সচল রাখতে প্রয়োজন যথাযথ সফ্টওয়্যার, যাতে হার্ডওয়্যারগুলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। পূর্বে MS-DOS বা Windows 95 অপারেটিং সিস্টেম নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়। নীচে এইরকমই নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম সম্বন্ধে আলোচনা করা হল।

(i) উইন্ডোস এনটি (Windows NT ) : Windows NT 3.1 ভার্সানটি 1993 সালে মাইক্রোসফ্‌ট কর্পোরেশন-এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই ভার্সানটির Windows 95 ভার্সানটির সমসাময়িক সময়ে প্রকাশ পেলেও Windows-এর সবকটি ভার্সানের থেকে এটির কার্যকারিতা ও ব্যাবহারিক দিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আসলে বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান বা নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার জন্যই Windows NT সফ্টওয়্যারটির প্রকাশ। এর জন্য বিশেষ ধরনের ফাইল সিস্টেম থাকে। NT-এর সম্পূর্ণ নাম New Technology। Windows NT নেটওয়ার্কে মেন সার্ভার ও ক্লায়েন্ট উভয় কম্পিউটারই ব্যবহৃত হয়।

(ii) নোভেল নেটওয়্যার (Novel Netware) : নোভেল নেটওয়্যার নোভেল নামক একটি বাণিজ্যিক সংস্থার অপারেটিং সিস্টেম। এই অপারেটিং সিস্টেম DOS-Base না হয়ে ক্লায়েন্ট/সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় শুধুমাত্র সার্ভার-এর কাজ করে। কোনো ক্লায়েন্ট-এর সঙ্গে কোনো ক্লায়েন্ট-এর সরাসরি যোগাযোগ ঘটে না। একমাত্র সার্ভার-এর মাধ্যমেই দুটি ক্লায়েন্ট-এর মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব হয়। এই সমস্ত অসুবিধা থাকার দরুন পরবর্তীকালে এর প্রয়োগ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

(iii) ইউনিক্স (Unix) : ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের সূচনা 1973-74 খ্রিস্টাব্দে। এটি ল্যাঙ্গুয়েজে (Language) লিখিত। এটিকে আমরা বিভিন্ন ভার্সান ও নানান রূপে (যেমন– SCO-Unix, ATNT-Unix) পেলেও কার্যকরী দিক থেকে প্রায় একই। এটিও অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মতো সার্ভার ও ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে।

তবে নেটওয়ার্কে অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় এটিকে স্থাপন করা যথেষ্ট কষ্টকর। এটি Character User Interface অর্থাৎ কমান্ড-এর সাহায্যে এটিকে কাজ করানো হয় এবং Unix কমান্ড অনেক বড়ো হওয়ায় এর অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার সাধারণের পক্ষে কষ্টকর। ফলে এটির ব্যবহার ক্রমশ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে।

(iv) লিনাক্স (Linux) : 1990 সালে ইন্টারনেটেই এই অপারেটিং সিস্টেমের জন্ম। এটি প্রায় ইউনিক্সের মতোই তবে পার্থক্য হল এই যে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর যে-কেউ এই অপারেটিং সিস্টেমের ব্যবহার করতে পারত অর্থাৎ এটি ছিল মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম (OS)। শুধু তাই নয়, একে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে নতুন রূপ দিতে পারত।

মূল কেন্দ্রে এই পরিমার্জিত রূপ পাঠাতে পারত। এইভাবে Linux-এর আরও উন্নতরূপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে নানাবিধ সংস্থা এর উন্নত রূপ দিয়েছে এবং আরও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। তাই এটি এখন আর সম্পূর্ণভাবে মুক্ত নয়।

(v) Windows (98/2000/XP/ME) : Windows 95 থেকে ক্রমশ পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হতে হতে উইন্ডোস অপারেটিং সিস্টেমের Windows 98/2000/XP/ME ইত্যাদি উন্নততর ভার্সানগুলি প্রচলিত হল। এটি যেহেতু GUI (Graphics User Interface) তাই এর সঙ্গে DOS-এর কোনো ভূমিকা নেই। এই অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার-এর কাজের সঙ্গে নেটওয়ার্কের তথ্যপ্রদানও খুব সহজভাবে করা যায়।

এই অপারেটিং সিস্টেমের নেটওয়ার্কিং-এ প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং সফ্টওয়্যারগুলিও থাকে। এই অপারেটিং সিস্টেম ক্লায়েন্ট ও সার্ভার উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *