কম্পিউটার আবিষ্কারের পথে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ গুলির ধারণা। যেমন – অ্যাবাকাস, নেপিয়ার বোন, পাস্কালাইন, ব্যাবেজ মেশিন, পাঞ্চড কার্ড, মার্ক-l , এনিয়াক, ইউনিভ্যাক সম্পর্কে জানুন

abacus meaning
Image by – modern computer application book

কম্পিউটারের ক্রমবিকাশ বলতে বোঝায় কম্পিউটার আবিষ্কারের পথে কোন কোন যন্ত্র বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এবং কার্যকলাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের গণনার কাজও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তৈরি করা হয়েছিল। যা আস্তে আস্তে বিবর্তন হতে হতে বর্তমান আধুনিক কম্পিউটারের রূপ ধারণ করেছে।

কম্পিউটারের ক্রমবিকাশ অর্থাৎ কম্পিউটার আবিষ্কারের পথে কোন কোন যন্ত্র বিভিন্ন সময়ে আবিষ্কৃত হয়েছিল তার নিচে আলোচনা করা হল।

অ্যাবাকাস যন্ত্র (abacus meaning)

অ্যাবাকাস যন্ত্রটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ নাগাদ চীন দেশের এক বিজ্ঞানী আবিষ্কার করেন। প্রাচীনকালে চীন, গ্রিস, রোম সহ বিভিন্ন দেশে আবাকাস যন্ত্রটি হিসাব করার জন্য ব্যবহৃত হত। অ্যাবাকাস যন্ত্রে কতকগুলি ধাতব শিক একটি কাঠের ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। প্রত্যেকটি সিকের মধ্যে গোলাকার চিনামাটির বিড্ বা পুতি লাগানো থাকে। পুঁটিগুলির মধ্যে ছিদ্র করা থাকে এবং এগুলি ধাতব রডের মধ্যে চলাচল করতে পারে। সবচেয়ে ডান দিকের প্রতিটির অবস্থান হলো একক, তারপরে প্রতিটির অবস্থান দশক, তারপরে শতক এবং এরপরে সহস্র, এইভাবে প্রত্যেকটি পুঁথি গণনার একক নাম হিসেবে পরিচিত। সাধারণ যোগ-বিয়োগ এই পুঁথিগুলির অবস্থানের মাধ্যমে নির্ণয় করা হত।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

নেপিয়ার বোন মেশিন (Napier’s Bone)

সপ্তদশ শতকে স্কট দেশের গণিতবিজ্ঞানী জন ন্যপিয়ার কার্ডবোর্ড গুণক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। এই বিজ্ঞানের নাম অনুসারে যন্ত্রটির নাম হয় নেপিয়ারস বোন। এই যন্ত্রটির বিশেষত্ব হল এটা দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ করা যেত। এটার মধ্যে পূর্ণ সংখ্যার দশমিক প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা ছিল।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

পাস্কালাইন যন্ত্র (pascaline)

ফরাসি গণিত বিজ্ঞানী ব্লেইস পাস্কাল ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে ছোট ছোট কিছু চাকার সাহায্যে একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। তারই নাম অনুসারে যন্ত্রটির নাম হয় পাস্কালাইন। এই যন্ত্রের সাহায্যে যোগ করা সম্ভব ছিল। যন্ত্রটিতে কিছু চাকা ব্যবহার করা হতো। ওই চাকা গুলি এককের চক্র, দশকের চক্র, শতকের চক্র হিসেবে চিহ্নিত থাকতো।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

ব্যাবেজ মেশিন (Babbage machine)

১৯২২ সালে চার্লস ব্যাবেজ নামে এক ইংরেজি বিজ্ঞানী ডিফারেন্স ইঞ্জিন নামে একটি যন্ত্র তৈরি করেন। এই যন্ত্রটি বিভিন্ন ধরনের গাণিতিক এবং পরিসংখ্যান সংক্রান্ত গণনা করতে পারে। ১৮৪২ সালে তিনি আরেকটি যন্ত্রের আবিষ্কার করেন যার নাম ‘স্বয়ংক্রিয় বিশ্লেষক মেশিন’। যার মাধ্যমে সাধারণ যোগ বিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন গাণিতিক পদ্ধতির দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু এই যন্ত্রটি নির্মাণের শেষ দিকে, যন্ত্রের প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে না পারায় ‘স্বয়ংক্রিয় বিশ্লেষক ইঞ্জিন’ যন্ত্রটির তৈরীর কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যপ্রণালীর ধারণা তিনি প্রথম দেন। তিনি প্রথম কম্পিউটারের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন। সেই জন্য তাকি কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

পাঞ্চড কার্ড মেশিন (punched card)

১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে হারম্যান হলেরিথ ( Herman hollerith ) তার সেনসাস যন্ত্রে পাঞ্চ কার্ডব্যবহার করে আমেরিকার জনগণনার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। বিজ্ঞানী হলেরিথের কোম্পানি এবং আর কয়েকটি কোম্পানি মিলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিন (IBM) নামক কোম্পানির জন্ম দেয়।

মার্ক-l মেশিন (Mark-l)

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হাওয়ার্ড এ. আইকেন IBM সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক মেকানিক্যাল কম্পিউটার বা Mark-l ( মার্ক ওয়ান ) গণক যন্ত্রটি তৈরি করেন। চার্লস ব্যাবেজের অসমাপ্ত কাজের বাস্তবায়ন প্রথম এই যন্ত্রে দেখা যায়। তাই এটিকে আধুনিক যুগের প্রথম গণক যন্ত্র বলা হয়।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

এনিয়াক মেশিন (ENIAC)

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুর স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এর দুই প্রফেসর জে.পি. একার্ট ও জন মেকলির নেতৃত্বে তৈরি হয় ENIAC , এর সম্পূর্ণ নাম হল ইলেকট্রনিক নিউ মেডিকেল ইন্টিগেটর এন্ড ক্যালকুলেটর । এই যন্ত্রটি ২০ ফুট × ৪০ ফুট স্থান জুড়ে থাকতো। এবং এই যন্ত্রে ১৮০০ টি ভ্যাকিউম টিউব ব্যবহৃত হয়েছিল।

abacus meaning
Image by – modern computer application book

এডস্যাক যন্ত্র (EDSAC)

ENIAC এর পরবর্তীকালে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত গবেষণার অধ্যক্ষ মরিস উইলএক্স এবং তার সহকর্মীরা EDSAC তৈরি করেন। EDSAC এর সম্পূর্ণ নাম হলো “ইলেকট্রনিক ডিলে স্টোরেজ অটোমেটিক ক্যালকুলেটর”।

ইউনিভ্যাক মেশিন ( UNIVAC-I )

১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে জন ম্যাকলি ও প্রেসপার একার্ট মিলে UNIVAC-I তৈরি করেন। এর সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে “ইউনিভার্সেল অটোমেটিক কম্পিউটার”। এটি প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হিসেবে পরিগণিত হয়। পরবর্তীকালে জেনারেল ইলেকট্রনিক কর্পোরেশন বাণিজ্যিকভাবে এটি ব্যবহার করে।

স্টোরেড প্রোগ্রাম কনসেপ্ট বা নিউম্যানের ধারণা

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ডঃ জন ভন নিউম্যান সঞ্চিত প্রোগ্রাম বা স্টোরেড নির্ভর একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। যেটি EDVAC বা ইলেকট্রনিক ডিসক্রিট ভেরিয়েবল অটোমেটিক কম্পিউটার নামে পরিচিত। ডক্টর জন ভন নিউম্যান প্রথম কম্পিউটারে বাইনারি গণিতের প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম বলেন যে প্রত্যেক সংখ্যায় ‘০’ বা ‘১’ এর সেট দ্বারা নির্দেশিত হবে। তার মতে নির্দেশ এবং ডাটা উভয়েই বাইনারিতে পরিবর্তিত হয়ে কম্পিউটারের কাছে নির্দিষ্ট অর্থবহ হবে। এটিই কম্পিউটারে সর্বপ্রথম কোন প্রোগ্রাম ও ডাটা একই মেমোরি ইউনিটের সঞ্চিত রাখার ব্যবস্থা ছিল।

গণিতজ্ঞ জনভর নিউম্যানকে আধুনিক পার্সোনাল কম্পিউটারের জনক বলা হয়। বর্তমানে অধিকাংশ কম্পিউটার নিউম্যানের প্রস্তাবিত মডেলের উপর ভিত্তি করে নকশা করা হয়েছে। নিউমেনের মতে কোন ডাটার গাণিতিক ও যুক্তিমূলক কাজ করার জন্য একটি ইউনিট থাকে। একে এরিথমেটিক এন্ড লজিক ইউনিট বলে। একটি কন্ট্রোল ইউনিট যা অ্যারেথমেটিক লজিক ইউনিটকে নির্দেশ পাঠাবে, এরিথমেটিক লজিক ইউনিট এবং কন্ট্রোল ইউনিট এই দুটি অংশ মিলিত হয়ে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU গঠন করে, যা কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

👉 conclusion

সাধারণ অর্থে বলা যায় উপরোক্ত যন্ত্রাংশ গুলির এক একটি ছিল বিশেষত গণক যন্ত্র। কিন্তু এই সমস্ত যন্ত্রাংশ গুলি আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই মানুষ আজ বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের কম্পিউটার তৈরি করতে পারছে। যা এই কম্পিউটার মানুষকে আজ মহাকাশে পাঠাচ্ছে। এবং যেকোনো ধরনের সমস্যাকে সঠিকভাবে এবং কম শ্রমিক ও কম সময়ে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।

📝 FAQ

১) অ্যাবাকাস কোন দেশে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হয়?

অ্যাবাকাস সর্বপ্রথম চীন দেশে আবিষ্কৃত হয়।

২) ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যপ্রণালীর ধারণা সর্বপ্রথম কে দেন?

১৯২২ খ্রিস্টাব্দে একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ সর্বপ্রথম ডিজিটাল কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী একটি ধারণা দেন।

৩) আধুনিক personal computer এর জনক কাকে বলা হয়?

ডঃ জন ভন নিউম্যানকে আধুনিক পার্সোনাল কম্পিউটারের জনক বলা হয়।

৪) পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গণক যন্ত্রের নাম কি?

অ্যাবাকাস হলো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো গণক যন্ত্র।

৫) পাস্কালাইন গণক যন্ত্রটি কবে আবিষ্কৃত হয়?

১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে পাস্কালাইন গণক যন্ত্রটি কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

৬) প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হিসেবে পরিচিত লাভ করে কোন গণক যন্ত্র?

ইউনিভ্যাক গণক যন্ত্রটি প্রথম ইলেকট্রনিক ডিজিটাল কম্পিউটার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

৭) আধুনিক যুগের প্রথম গণক যন্ত্র কোনটি?

মার্ক-l গণক যন্ত্রটি আধুনিক যুগের প্রথম গণক যন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *